বিদ্যুতের পরিস্থিতি ১০-১৫ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ২০:৪২

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

জাতীয় গ্রিডে আরও বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ার ফলে চলমান বিদ্যুতের পরিস্থিতি আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, আমরা লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছি। আমি জানি, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, মানুষের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করতে পারি। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি। আগামী দু-একদিনের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে আরও বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। তখন আর কোনো কষ্ট থাকবে না।

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, এবার মানুষকে প্রচন্ড গরম সহ্য করতে হচ্ছে যা অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রিতে উঠবে তা আমরা ভাবতেও পারতাম না।

বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ আন্দোলন করবে, সংগ্রাম করবে। আর আমাদের উৎখাত করবে। একদিকে ভালো হয়েছে, সেটা হলো এখন যদি জ্বালাও-পোড়াও করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ খুন করে তাহলে আমেরিকার ভিসা পাবে না। যাদের কথায় নাচে, তারাই খাবে। আমাদের কিছু করা লাগবে না। ওইটা নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নাই।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারা কিছু লোক জোগাড় করবে, বসে থাকবে, আন্দোলন করবে। করতে দাও, করতে দেবেন। আমি বলে দিয়েছি যত আন্দোলন করতে চাইবে করুক। আমরা কিছু করবো না।

২০১৩, ১৪, ১৫ এর মতো দলটি যাতে আগুন সন্ত্রাস করতে না পারে সে দিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিজের চোখ, ক্যামেরা সবসময় ঠিক রাখতে হবে। কারণ ওদের আবার ওই দোষ আছে তো। একটা উসকানি দিয়ে তারপর ছবি উঠিয়ে ওই বাইরের কাছে কানতে থাকবে।

বিএনপি জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বাস করে কোথা থেকে এসে নাগারদোলা চাপিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কেউ দেবে না। দেয় না কখনও। ব্যবহার করে। ব্যবহার করবে, কিন্তু ক্ষমতা দেবে না। এটা হলো বাস্তবতা, বাস্তব কথা। ক্ষমতা একমাত্র জনগণই দিতে পারে। জনগণের সেই অধিকার, সচেতনতা আমরাই দিতে পেরেছি।

তিনি বলেন, আজ গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটের অধিকারের কথা বলে। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিল। কত ভোট পড়েছিল? ২-৩ শতাংশ ভোটও পড়ে নাই। কিন্তু ঘোষণা দেওয়া হলো সব ভোট নিয়ে তিনি তৃতীয়বারের (দ্বিতীয়বার হবে) মতো প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার নিয়ে এখন সচেতন। সেই সচেতনতা আমরা সৃষ্টি করেছি। বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার কেউ যদি কেড়ে নেয়, মানুষ তাদের ছেড়ে দেয় না। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করেছিল বলেই এই দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল, আন্দোলন করেছিল। এর ফলে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। এই কথাটা সবার মনে রাখা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, এ ভোট চুরি ও ডাকাতি যারা করেছিল আজ তাদের মুখে ভোটের কথা শুনি, গণতন্ত্রের কথা শুনি…। মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বের হওয়া দল থেকে গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়।

২০০১ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল দাবি করে দলটির সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে সবসময় জয়ী হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কোনোদিন পরাজিত হয় নাই। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোটেই এসেছে। তার বাইরে কখনও ক্ষমতা দখল করে নাই। আজ তারা বলে ভোটারবিহীন। কে ভোটারবিহীন? ভোটারবিহীন তো ছিল খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান। ভোটারবিহীন ছিল এরশাদ। এটা তারা ভুলে গেছে? তারা তো ভোটারবিহীন হিসেবেই ক্ষমতা দখল করেছে। খালেদা জিয়াকে উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিয়েছে এই দেশের জনগণ।

২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে ‍নির্বাচন (২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচন) ঘোষণা দিয়েছিল সেখানেও তাদের অনেকেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ ওই ভোট চুরি করা মানে নাই। আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে, খালেদা জিয়ার পতন ঘটেছে। কাজেই দুই-দুইবার ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়ার পতন ঘটেছে। এই কথা

বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনলে মনে হাসি পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওরা আবার গণতন্ত্রের কথা কয়। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করেছে আওয়ামী লীগ। শুধু গণতন্ত্র না, জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষা করেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে এসেছে।

বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা এসেছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরি অবস্থা এসে ভোটার তালিকা সংশোধন করেছে এটা ঠিক। আমাদের দাবিই ছিল এটা। স্বচ্ছ ব্যালট বক্স। এটাও আমাদের দাবি ছিল। নির্বাচন কমিশন যাতে নিরপেক্ষ হয় এর জন্য আমরা আইন করে দিয়েছি। তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত হচ্ছে, আমরা সরকার করছি না। তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও আমরা দিয়েছি। যাতে জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। এই দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যাতে থাকে তার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগই করেছে। হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে আমরা সংবিধান সংশোধন করে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পারলেও দুর্ভাগ্য একদিকে করোনা ভাইরাসের তিনটা বছর। সবকিছুর চলাচল বন্ধ। অর্থনীতির চালিকা স্থবির। উন্নত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। এরপর আসল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় প্রতিটি দ্রব্যের দাম বেড়ে গেলো। প্রতিটি জিনিসের দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে সেটা কেনা, আনা, পরিবহন করা। আবার এ জাহাজে আসল কেন? সেটা আসতে দেবে না, ভিড়তে দেবে না। ওই জাহাজে আসল কেন সেটা ভিড়তে দেবে না। খালি দেশের ওপর না, জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসে থাকল আমেরিকা। যার ফলে প্রত্যেকটা দেশে মুদ্রাস্ফীতি।

বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা জ্ঞানী-গুণী আছেন বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে যাহারা-বুদ্ধিজীবী। অনেক পড়াশোনা জানে এটা ঠিক। অনেক কিতাব পড়ে। ওই কিতাবই পড়েছে। আমি বিদ্যুৎ দিয়েছি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে তারা বক্তৃতা করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সেটার সুযোগ নেয়। প্রাইভেই টেলিভিশন আওয়ামী লীগ দিয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে টকশো করে বলে দেবে এই বাজেট আওয়ামী লীগ কোনোদিনই বাস্তবায়ন করতে পারবে না। আমি স্পষ্ট করতে চাই, কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারব এটা জেনেই বাজেট দিয়েছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত