সেই বাবুলের স্ত্রী মিতু হত্যার আসামি কালু গ্রেপ্তার

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ১১:০৬

চট্রগ্রাম
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল ও স্ত্রী মিতু

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার আসামি খাইরুল ইসলাম কালুকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। রাঙ্গুনিয়া থানার একটি মামলায় পিবিআই তাকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার গভীর রাতে থানা পুলিশকে হস্তান্তর করে বলে জানিয়েছেন ওই থানার ওসি মাহবুব মিল্কী। 

তিনি বলেন, মিতু হত্যা ছাড়াও ২০১২ সালে রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় একটি মামলার পলাতক আসামি ছিলেন কালু। পিবিআই তাকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার করে রাঙ্গুনিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে।

মিতু হত্যামামলা তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই। সেখানে মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলকেই খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। খুনের দিন কালু মিতুকে ছুরিকাঘাত করেছিলেন বলে পিবিআইর দাবি।

পিবিআইর এক কর্মকর্তা জানান, নগরীর আকবর শাহ থানার ছিন্নমূল এলাকা থেকে শুক্রবার গভীর রাতে কালুকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিতু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সে পালিয়ে ছিল। আকবর শাহ এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি জায়গায় প্রহরী হিসেবে কাজ করত কালু।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। বাবুল তার কয়েকদিন আগেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বদলি হয়েছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের ১৯ দিন পর ওই বছরের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুলকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। তার কিছু দিন পর পুলিশের চাকরিও ছেড়ে দেন তিনি।

বাবুলকে জিজ্ঞসাবাদের দুদিন পর ২৬ জুন মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় পুলিশ। তারা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার ‘পরিকল্পনাতেই’ এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়।

জবানবন্দিতে ওয়াসিম জানান, নবী, কালু, মুছা ও তিনি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। নবী ও কালু মিতুকে ছুরিকাঘাত করেন।

খুনের পর মুছার সন্ধান এখনও জানা যায়নি। তার স্ত্রী পান্না আক্তার ২০১৬ সালের ৪ জুলাই চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছিলেন, ওই বছরের ২২ জুন বন্দর থানার তৎকালীন ওসি মহিউদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বন্দর এলাকায় তার এক পরিচিত ব্যক্তির বাসা থেকে মুছাকে ধরে নিয়ে যান।

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ দাবি নাকচ করে দিয়েছিল। এর তিন মাস পর ২০১৬ সালের ৬ অক্টোবর সিএমপি তৎকালীন কমিশনার ইকবাল বাহার মুছা ও কালুর সন্ধান পেতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন।

তদন্ত করতে গিয়ে খোদ বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে ২০২১ সালের মে মাসে ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। তখন বাবুলকে আসামি করে নতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

তবে আদালতের নির্দেশে সেই মামলার সমাপ্তি ঘটে এবং বাবুলের মামলাটিই পুনরুজ্জীবিত হয়। এ বছরের ৯ এপ্রিল প্রথম সাক্ষী মিতুর বাবা মোশাররফের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাবুলসহ সাত আসামির বিচার শুরু হয়।

বাবুল ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু। 

হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পূর্তির তিন দিন আগে কালু গ্রেপ্তার হলেও মুছা এখনেও পুলিশের চোখে  পলাতক।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত