লক্ষ্মীপুরে শিশু হত্যার দায়ে আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩, ১৬:৩৫

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে স্বর্ণের কানের দুল খুলে নেওয়ায় কান্না করলে মুখ-গলা চেপে শিশু পপি সাহাকে (৭) হত্যার ঘটনায় রুনা আক্তার আঁখির আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ৩ আনা স্বর্ণের কানের দুলের লোভে শিশু পপিকে হত্যা করে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। রুনার স্বামীও এ মামলার আসামি ছিলেন। তিনি হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এতে আদালত তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। রায়ের সময় তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

খালাসপ্রাপ্ত এমরান গাছ কাটার শ্রমিক ছিলেন ও উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের পূর্ব কেরোয়া গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে।  দণ্ডপ্রাপ্ত রুনা পূর্ব কেরোয়া গ্রামের আবদুল মতিনের মেয়ে ও এমরানের স্ত্রী। পপি সাগরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন ও বামনী ইউনিয়নের সাগরদি গ্রামের প্রবাসী নির্মল সাহার মেয়ে। 

আদালত ও এজাহার সূত্র জানা যায়, ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর সকালে প্রাইভেট পড়ে এসে বাড়ির পাশেই পপি খেলছিল। তখন রুনা তাকে ডেকে ঘরে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তার কানের দুলগুলো খুলে নেয় রুনা। এতে পপি কান্না করে উঠে। কান্নার শব্দ যেন কেউ শুনতে না পায় এজন্য ল মুখ ও গলা চেপে ধরলে পপি মারা যায়। পরে তার মৃতদেহ চৌকির নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। বাড়ি ফিরলে রুনা তার স্বামীকে বিষয়টি জানায়। এতে পপির মৃতদেহ গুম করার পরিকল্পনা করে তারা। পরে ঘরের দুটি দরজার একটির বাইরে তালা ও অন্যটি ভেতর দিয়ে আটকে রেখে রুনা ও এমরান ঘরে অবস্থান করছিল।

এদিকে ভাত খাওয়ানোর জন্য পপিকে তার মা ববিতা রানী সাহা ডাকলেও কোন সাড়া পাচ্ছিল না। আশপাশসহ সম্ভাব্য স্থানে খুঁজেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অন্যদিকে দুপুরে রুনা ও এমরানের ঘর বন্ধ দেখে লোকজনের সন্দেহ হয়। এতে বাড়ির এক নারী মই ব্যবহার করে জানালার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভেতর তাদের দেখতে পায়। পরে দরজা ভেঙে লোকজন ঘরে ঢুকে। এসময় রুনা ও তার স্বামী পালাতে গেলে লোকজন তাদেরকে আটক করে। ঘরের ভেতর পপির জুতা পাওয়া যায়। পরে চৌকির নিচে তাকালে বাম দিকে ঘাড় বাকানো অবস্থায় পপিকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাকে বের করতে গেলে বুঝা যায় পপির নিথর দেহ কৌশলে চৌকির নিচে বসিয়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন অভিযুক্তদের বাড়ির সামনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। 

একইদিন রাতে ববিতা বাদী হয়ে রায়পুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন রুনা ও এমরানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এছাড়া হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। একই বছর ১১ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রায়পুর উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত রায় প্রদান করেন।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত