প্রাইভেটের টাকার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে দুই ছাত্রীকে মারধর

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১২:৫৪

ফয়েজুর রহমান রকি

লক্ষ্মীপুরে দারুলউলুম কামিল (এম.এ) মাদ্রাসায় বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন সময় ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী ফাতেমা জোহরা মীম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী নুহাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার সহকারী (বাংলা) শিক্ষক সালমা আক্তারের বিরুদ্ধে। মারধরের কারণে দুই ছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকালে সুবিচার পেতে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীর মা মর্জিনা বেগম।

জানা যায়, ওইদিন সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে দায়িত্বরত অবস্থায় শিক্ষক সালমা আক্তার ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী মীম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী নুহাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে খামছি দিয়ে ছাত্রী মীমের মুখ-মন্ডলে মারাত্মকভাবে জখম করে। পরে মীম ও নুহাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী মীম একসময় বাংলা শিক্ষক সালমার কাছে প্রাইভেট পড়তো। ১০ দিন প্রাইভেট পড়ার পর, হঠাৎ মীম প্রাইভেট পড়া বন্ধ করে দেয়। তখন মীম তার ১০ দিনের প্রাইভেট পড়ার টাকা দিতে চাইলে শিক্ষক সালমা সেই টাকা নেননি। মঙ্গলবার মীমের হাদিস পরীক্ষা। সেই কেন্দ্রের দায়িত্ব পড়ে সালমা আক্তার ও জলিল শিক্ষকের। দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় সালামা ও জলিলের মধ্যে যেকোন বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। হঠাৎ ছাত্রী মীমের দিকে দৃষ্টি পড়ে সালমা শিক্ষকের। এসময় শিক্ষক সালমা  মীমের ওপর রাগান্বিত হয়ে বলে তুই তো আমার টাকা দিলি না। অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে, মীমকে একাধিক চড়থাপ্পড় মারতে থাকে সালমা। মীমের পাশে বসা নুহাকেও মারধর করে। পরে খবর পেয়ে তাদের স্বজনরা এসে তাদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।

কান্নাজনিত কন্ঠে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী মীম মাদ্রাসার মাঠে চিক্কার করে বলতে থাকে, আমার কি অপরাধ? সবার সামনে সালাম ম্যাডাম আমাকে অন্যায়ভাবে মারছে। আমার মুখের হিজাব টানেহিঁচড়ে খুলে ফেলছে। আমারতো কোন দোষ ছিল না। আমার কিছু হলে এ মাদ্রাসা ও সালামা ম্যাডাম দায়ী। কখনো আমার মা-বাবা আমাকে একটি থাপ্পড় দেয়নি। আজ প্রকাশ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে আমাকে এভাবে মারধর করছে। আমি এ মুখ কিভাবে দেখাবো।

অভিযুক্ত শিক্ষক সালমা বলেন, আমার কাছে মীম ৫ মাস প্রাইভেট পড়ছে। হঠাৎ সেই আর প্রাইভেটে আসছে না, আমার টাকাও দিচ্ছে না। এছাড়া মীম আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। তাই আমি আজ তাকে চড়থাপ্পড় দিলাম। এখানে দোষের কি!

লক্ষ্মীপুর দারুলউলুম কামিল (এম.এ) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নেছার উদ্দিন আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, সত্যিই আমরা লজ্জিত। একজন শিক্ষক এভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে রাগান্বিত হয়ে ছাত্রীদের মারধর করবে কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমাদের মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জরুরি মিটিং করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এবিষয়ে জানতে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেনকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, ঘটনাটি খুব দুঃখজনক।  বিস্তারিত জেনে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত