খুলনায় বিএনপির সমাবেশে ৬০ নেতাকর্মী আটকের দাবি

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২২, ১৭:১০

শেখ নাদীর শাহ্,খুলনা

খুলনার বিভিন্ন এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতভর অভিযান চালিয়ে বিএনপির ৬০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে খুলনার কেডি ঘোষ রোডের বিএনপি কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এই অভিযোগ করেন।

খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই নগরজুড়ে পুলিশের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সারারাত পুলিশ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। আটক করা হয়েছে ৬০জনকে। পুলিশের তৎপরতায় বিভিন্ন এলাকায় ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে ধরপাকড় চালিয়ে সমাবেশমুখী জনস্রোত ঠেকানো যাবে না।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সমাবেশকে বানচাল করতে গোটা বিভাগ জুড়ে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লঞ্চ ঘাট, ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বাগেরহাট, নড়াইল থেকে কি বিএনপির নেতাকর্মীরা পায়ে হেটে আসবেন? নদী সাঁতরে খুলনায় আসবেন? এ কেমন মানসিকতা? স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের নারী, পুরুষ, শিশু বুকের রক্ত দিয়েছিলেন। সেই দেশের এমন পরিস্থিতি হবে কেন এমন প্রশ্ন করেন তিনি?

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একাত্তরে রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যেখানে অবস্থান করছিলেন, পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। একজন মহান মুক্তিযোদ্ধাকে পুলিশ রীতিমতো অপমান করেছে।

অন্য বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি প্রদানে প্রশাসন কালক্ষেপন করলেও খুলনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে জানিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, খুলনায় অনুমতি চাওয়া মাত্র প্রশাসন তা দিয়েছে। এ জন্য দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কিন্ত তারপর থেকে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রশাসনকে বলবো, যা হয়েছে হয়ে গেছে। এবার এসব বন্ধ করেন। আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিন। উস্কানি না দিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন।

তিনি বলেন, দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হয়ে চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এ সমাবেশ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। জনদাবির সমর্থনে আন্দোলন শহীদ পাঁচ সহকর্মী হত্যার বিচারের দাবিতে। এই সমাবেশ দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে। জ্বালানি তেল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে। যে কোন মূল্যে এই কর্মসূচি সফল করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্তসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা আহবায়ক আমীর এজাজ খান, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, নগর সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ তারিকুল ইসলাম জহীর ও জেলার আবু হোসেন বাবু।

এদিকে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন থানায় অর্ধশত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে খুলনা সদর থানায় খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, মিজানুর রহমান বাবু, বেল্লাল হোসেন, জসমিউদ্দিন লাবু, শফিকুল ইসলাম, মিজান ও কবির ফরাজি, সোনাডাঙ্গা থানায় নজরুল ইসলাম, ডালিম, ডা. শাহ আলম, মাহমুদ আলম বাবু মোড়ল, জুলু, কাজী সেলিম, খালিশপুর থানায় মেহেদী, সামাদ বিশ্বাস, গোলাম মোস্তফা ভূট্টো, মোঃ হাসান, মোল্লা কওসার, দৌলতপুর থানায় হুমায়ুন কবির, রাসেলুজ্জামান, খানজাহান আলী থানায় জসীম ভূইয়া, মামুন ও উজ্জল এবং হরিণটানা থানায় কামাল, হেলাল ও হযরত আলী। এছাড়া বাগেরহাট থেকে আগত ৪জনকে খুলনা থানা পুলিশ এবং মোড়েলগঞ্জ বিএনপি নেতা খায়রুজ্জামান শিপনের বাসা হতে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে গভীর রাতে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীবাহী একটি গাড়ি সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। যেখানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর মুন্সি, কৃষক দল আহবায়ক মুকুল মেম্বার সহ ১১ জন রয়েছেন বলেও দাবি করেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত