ঈদুল আযহা

রাজধানী ছাড়ছে ৮০ লাখ মানুষ

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২২, ১৫:০০

সাহস ডেস্ক

বছর ঘুরে আবার এসেছে ঈদুল আযহা। বাৎসরিক এই ছুটির লগ্নে এবার ঢাকা ছাড়বে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। রাজধানী ছাড়া এসব মানুষের বেশির ভাগই নিজ গন্তব্যে পৌঁছাবে দূরপাল্লার বাহনযোগে। গত ঈদে মোটরসাইকেলে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়লেও এবার এই বাহনের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এদিকে পদ্মা সেতু হওয়ায় কিছুটা কমে এসেছে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চের যাত্রীসংখ্যা। তবে রেল ও বিমানে প্রতি ঈদের মতো এবারও পরিস্থিতি প্রায় একই থাকবে। অন্যান্য বছরের ঈদ যাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ এবং পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, ৬০ শতাংশ যাত্রী যাবে বাসে। রেলে ৮ থেকে ১০ শতাংশ, লঞ্চে ২০ শতাংশ, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়িতে ১০ শতাংশ এবং বিমানে ১ শতাংশেরও কম মানুষ ঢাকা ছাড়বে। এবার রাজধানী থেকে দূরপাল্লার পথে প্রায় ১০ হাজার বাস চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হোসেন মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, গড়ে প্রতিটি বাস দিনে দুই ট্রিপ দেবে। প্রতি বাস গড়ে ৪০ জন যাত্রী পরিবহন করবে। সে হিসাবে দিনে গড়ে আট লাখ যাত্রী পরিবহন করবে বাসগুলো। ঈদ যাত্রার পাঁচ দিনের হিসাব করলে যা দাঁড়ায় ৪০ লাখে। এই ৪০ লাখ যাত্রীর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ যাত্রী বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিক। তারা দল বেঁধে নিজেরাই বাস ভাড়া করে গন্তব্যে যান।

রাজধানীর সদরঘাট থেকে প্রতিদিন ছেড়ে যাওয়ার মতো বড় লঞ্চ রয়েছে ৫০ থেকে ৬০টি। এর সঙ্গে কিছু ছোট লঞ্চও যুক্ত হবে। এবারের ঈদ যাত্রায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১২০টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি লঞ্চের গড় ধারণক্ষমতা দেড় হাজার যাত্রী। সেই হিসাবে লঞ্চে যাত্রী বেশি যাওয়ার কথা থাকলেও এবার তা হচ্ছে না। গত ঈদে লঞ্চে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ে। এবার পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণের পথে বাসে যাত্রীসংখ্যা বাড়বে। তাই কমবে লঞ্চের যাত্রী। এবার নৌপথে ১৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, এবার মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ে জটিলতা থাকলেও ঈদ ঘিরে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে ১০ লাখ ট্রিপ হতে পারে। এ ছাড়া মাইক্রোবাস, মিনিবাস ও বিভিন্ন অফিসের গাড়িতে আরো আট লাখ যাত্রী ঢাকা ছাড়বে। এর সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়িও যুক্ত হবে। গত ঈদে মোটরসাইকেলে ১২ লাখ ট্রিপে ২৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ে বলে তথ্য দেয় সংগঠনটি।

সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবার মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে মোটরসাইকেলে যাত্রা আটকানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তারা বলছেন, মোটরসাইকেলে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। গত মঙ্গলবার থেকে রেলে ঈদের যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৩৮ জোড়া আন্ত নগর ট্রেনে ২৬ হাজার ৬৬৩টি আসনে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে। এতে আরো প্রায় দুই হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। আন্ত নগর, লোকাল ও কমিউটার মিলিয়ে ঢাকা থেকে প্রতিদিন আসনের হিসাবে পরিবহন করা যাবে ৫০ হাজার যাত্রী। সেই হিসাবে পাঁচ দিনে আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। তবে এর সঙ্গে আরো প্রায় আড়াই লাখ মানুষ দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবে বলে ধারণা করেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।

কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার গণমাধ্যমকে জানান, সব মিলে ঢাকা থেকে রেলের ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। কিছু ট্রেনে এই সময়ে মোট আসনের ২০ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে রেলে আসন ছাড়া কত যাত্রী ভ্রমণ করবে, তার হিসাব নেই। বাস ট্রেন লঞ্চ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ রুটে বাংলাদেশ বিমানসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যাত্রী পরিবহন করে থাকে। বিমান সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ঈদের আগের চার দিনে এসব বিমানে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। সাতটি রুটে প্রতিদিন গড়ে ৩৫টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। প্রতিটি ফ্লাইটে গড়ে ৭৫টি করে আসন আছে। শুধু বাস, লঞ্চ, ট্রেন, মোটরসাইকেল বা মাইক্রোবাসেই সরাসরি মানুষ ঢাকা ছাড়বে তা নয়। এর বাইরেও বহু মানুষ ভেঙে ভেঙে পথ পাড়ি দেবে। পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকেও শেষ মুহূর্তে ঢাকা ছাড়ার নজির রয়েছে। তবে সেই বেহিসাবি খাতের হিসাব পাওয়া যায় না।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব বলছে, গত ঈদ যাত্রার ১৫ দিনে সারা দেশে ৩৭২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১৬ জন। আহত ৮৪৪ জন। যদিও সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ৪০২ টি দুর্ঘটনায় ৪৪৩ জন নিহত ও ৮৬৮ জন আহত হয়েছেন। ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরে যাতায়াতের সঙ্গে তুলনা করলে গত ঈদে সড়কে ১৪.৫১ শতাংশ দুর্ঘটনা বেশি হয়। নিহতের সংখ্যা বাড়ে ২২.৩৫ শতাংশ এবং আহত ২৬.৩০ শতাংশ বাড়ে। এবারও সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং বন্ধের সিদ্ধান্তকে পুঁজি করে ব্যক্তিগত বাইক নিয়ে চলাচলকারীদের যাত্রাপথে হয়রানি করা হলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে। গত ঈদ যাত্রায় দুর্ঘটনার শীর্ষে ছিল মোটরসাইকেল। ঈদে মোট ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ১১০ জন।

সাহস২৪.কম/এসএস/এসটি/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত