নাস্তিক আখ্যা দিয়ে অধ্যাপকের বাসায় হামলা

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২২, ২১:৩১

সাহস ডেস্ক

নাস্তিক আখ্যা দিয়ে নাট্যকার অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর বাসায় ‌“একদল মুসল্লি হামলা” চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় এই অধ্যাপক এবং তার গাড়িচালককে লাঞ্ছিত করা হয়। এ নিয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর পরিবার। তবে পুলিশ বলছে, শুক্রবার (১ জুলাই) জুমার নামাজের সময় বাসার গেটের সামনে মোটরসাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে মুসল্লিদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়েছে। রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর মেয়ে পূর্ণাভা হক সিদ্দিকী সাহসকে বলেন, “শুক্রবার জুমার নামাজের সময় কয়েকশো মানুষ আমাদের বাড়ির গেটে হামলা করে, গেট ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। আমার বাবা ও তার গাড়িচালকের গায়ে হাত তোলে। এ সময় আমার মা ও বাড়ির কেয়ারটেকারকেও গালিগালাজ করে।” হামলার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “একটি চক্র বাসার গেটের সামনে নিয়মিত বাজার বসায়, গেটের সামনে সবজির ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে। এসব কারণে আমরা বাড়িতে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারি না। আজও গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছিল না। গেটের সামনে একটি মোটরসাইকেল রাখা ছিল, বাবা মোটরসাইকেলটি সরাতে বলেন। তারা বলেন, সরাবেন না। এরপর হঠাৎ করেই নাস্তিক নাস্তিক বলে চিৎকার করে বাসার গেটে হামলা শুরু করে। এ সময় অনেকেই হিন্দু, হিন্দু বলে চিৎকার করেন। এদের মধ্যে কেউ ঢিল ছোড়েন, তারপর গেট ভাঙার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নারায় তাকবির বলে স্লোগানো দিতে থাকেন।”

অধ্যাপকের মেয়ে আরও বলেন, “তারা বলেন, এই বাসার সামনে কোনো কুকুর থাকতে পারবে না। কুকুরকে খাওয়ানো যাবে না। হুমকি দেয়, আমাদের মেয়েদের বের হতে দেবে না। কুকুরগুলো মেরে তাড়িয়ে দেবে। জুমার নামাজের পর থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ রকম চলতে থাকে। কেউ আসেনি সাহায্য করতে।” এলাকার মুসল্লি, ভ্যানওয়ালা ও কিছু বস্তির ছেলেরা এই হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে পূর্ণাভা হক সিদ্দিকী বলেন, “হামলার দেড়ঘণ্টা পর পুলিশ আসে। আর বাসার সামনের স্কুলের প্রিন্সিপাল স্যার ও কয়েকজন শিক্ষক আসেন। আমার বাবা একজন শিক্ষক, একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব। আজকে তাকে অসম্মানিত হতে হলো। হামলার শিকার হতে হলো।”

রতন সিদ্দিকীর মেয়ে বলেন, “বাসার সামনে ভ্যান দিয়ে বাজার বসালে কিছু বলতে পারবে না, এ কেমন কথা। যে মানুষ আজীবন সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে সমাজে চলেছেন, আজকে মসজিদে বসে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হামলা করা হলো কেন? তারপরও আমার বাবা হাত জোর করে ক্ষমা চেয়েছে, সেই হামলাকারীদের কাছে। এর দায় কার?” তিনি আরও বলেন, “সারাজীবন এই মানুষটি সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন। রাজপথে থেকেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলেছেন। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলেছেন। আজকে তাকেই হামলার শিকার হতে হয়েছে।” মেয়ে আরও বলেন, “দুপুরে আমার বাবা ও মা গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলেন। তারা গেটের সামনে এসে আটকে যায়। এ সময় বাসার গেটের সামনে থেকে মুসল্লিদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলে তারা সরবে না বলে গালিগালাজ করে। এমন কোনো গালি নেই তারা বাবা-মাকে দেয়নি। তারা মারমুখী হয়ে ওঠে, এরপর কোনোরকমে আমার মা ভেতরে প্রবেশ করেন। কিন্তু বাবা ও গাড়িচালককে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে মারধর করে।”

এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরার বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোর্শেদ আলম বলেন, “মূলত রতন সিদ্দিকীর বাসা মসজিদের পাশে, আজকে জুমার দিন ছিল, সবাই বাসার সামনে মোটরসাইকেল, ভ্যান রেখে নামাজ পড়ছিল। এ নিয়ে মুসল্লিদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়।”

প্রসঙ্গত, ড. রতন সিদ্দিকী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ এ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। নাটকে অবদান রাখায় ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন। তার স্ত্রী ফাহমিদা হক কলিও একজন লেখক ও নাট্যব্যক্তিত্ব।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত