বন্যায় সিলেট বিভাগে ২২ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ১

প্রকাশ | ২১ জুন ২০২২, ২১:২১

অনলাইন ডেস্ক

সিলেট ও সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। দুই জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। সোমবার পর্যন্ত পানিবন্দি ছিলেন অন্তত ৪০ লাখ মানুষ। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। ভয়াবহ এ বন্যায় সিলেট বিভাগে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটে ১২ জন, মৌলভীবাজারে তিনজন ও সুনামগঞ্জে পাঁচজন। তবে মঙ্গলবার (২১ জুন) সকালে সিলেটের জৈন্তাপুরে মা-ছেলের মৃতদেহ ভেসে ওঠায় এ তথ্য যোগ হবে। সে অনুযায়ী, বন্যায় সিলেট বিভাগে এখন পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে সোমবার পর্যন্ত সিলেটের জেলা প্রশাসক একজনের, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিনজনের ও ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে স্থানীয় সূত্রে আরও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও সত্যতা নিশ্চিত করেনি প্রশাসন। এদিকে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর তথ্য জানা যাচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় পানিতে ভেসে আসে নাজমুন্নেসা ও তার ছেলে আব্দুর রহমানের মৃতদেহ। তারা দরবস্ত ইউনিয়নের কলাগ্রামের বাসিন্দা।

মা-ছেলের মৃতদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার নাজমুন্নেসা তার ছেলেকে নিয়ে পাশের গ্রামে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। মেয়ের বাড়িতেও পানি উঠে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে মা-ছেলে সড়কের পাশে পানিতে তলিয়ে যান। মঙ্গলবার তাদের মৃতদেহ ভেসে উঠে। জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার উপজেলার সাতবাক ইউনিয়নের ঠাকুরের ঘাঁটি এলাকার এক ব্যক্তি হাওরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। পরদিন পানিতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। শুক্রবার মৃতদেহ উদ্ধার হলেও এ তথ্য জানা গেছে মঙ্গলবার। তবে তার নাম জানা যায়নি। এ ছাড়া কানাইঘাটে একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুর তথ্য অনেকেই প্রচার করছেন ফেসবুকে। তবে এর সত্যতা নেই বলে জানিয়েছেন ওসি। এর আগে সোমবার সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, পানিতে পড়ে যাওয়া সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো তথ্য তিনি পাননি।

সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আজমেরী হক সোমবার জানান, বন্যায় এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর তিনি জেনেছেন। এর মধ্যে একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ও দুজনের পানিতে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া পানিতে ভেসে যাওয়া একজন এখনও নিখোঁজ আছেন। তিনি জানান, এদিন সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার নোয়াপাড়া এলাকার নিজ বাসায় বন্যার পানির ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু হয় মনির হোসেন নামের এক যুবকের। শুক্রবার উপজেলার নলকট গ্রামের কলেজছাত্র আব্দুল হাদি পানিতে তলিয়ে যান। ওই দিনই তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সে সময় আরও একজন পানিতে তলিয়ে গেছেন। তবে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক সেলিম আহমদ জানান, পানিতে তলিয়ে উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন ছাত্রলীগ নেতা এ কে আবুল কাশেম ও তার দাদি ছুরেতুন নেছা। তাদের বাড়ি ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামে।

সেলিম জানান, আবুল কাশেম তার পরিবারের সঙ্গে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় বসবাস করেন। বন্যার পানি বেড়েছে জেনে গ্রামের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ দাদি ও চাচাতো বোনকে উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার সকালে একটি নৌকা নিয়ে আসেন। দাদিকে নিয়ে শহরে ফেরার পথে সুজাতপুর আইডিয়াল স্কুল এলাকায় পানির স্রোতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় তার ছোট চাচাতো বোন উল্টে যাওয়া নৌকা ধরে প্রাণে বাঁচলেও দাদি-নাতি দুজনই পানিতে তলিয়ে যান। শুক্রবার দাদি ছুরেতুন নেছার মৃতদেহ ভেসে ওঠে। আর রবিবার সকালে আবুল কাশেমের মৃতদেহ একই জায়গায় ভেসে ওঠে। তবে এ দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য পাননি বলে জানিয়েছেন ইউএনও নুসরাত।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পানিতে তলিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ফেসবুকে প্রচার হয়েছে। তবে একে গুজব বলেছেন উপজেলার ইউএনও লুসিকান্ত হাজং। তিনি জানান, আমরা এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর তথ্য পাইনি। অনেকে মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছিলেন। তবে তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

বন্যায় পানিতে তলিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার জুনেদ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাতকের ইউএনও মামুনুর রশীদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাতক পৌরসভার কানাখালী রোডের আখড়া এলাকায় পীযূষ ও জাউয়া বাজার এলাকায় হানিফা বেগম নামের এক স্কুলছাত্রীর পানিতে তলিয়ে মৃত্যু হয়। তবে এই দুই ঘটনা ইউএনও নিশ্চিত করেননি। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে তলিয়ে এক শিশুর মৃত্যু হওয়ার খবরও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এটিও প্রশাসন নিশ্চিত করেনি।

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিতদের উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,  কানাইঘাট থেকে অসুস্থ অবস্থায় সাতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে মৃত্যুর কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

সাহস২৪.কম/টিএ/এসকে.