‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে’

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২২, ১৭:০০

সাহস ডেস্ক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার যদি কোনো অঘটন ঘটে, তাহলে এই দেশের মানুষ আপনাদের (আওয়ামী লীগকে) ক্ষমা করবে না।’ রবিবার (১২ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। পরশু রাতেও তিনি যখন হৃদরোগে আক্রান্ত হন, তখন তার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। চিকিৎসকদের ধন্যবাদ দেই যে তাদের অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপে রিং লাগিয়ে তার লাইফ সেভ করেছেন। কিন্তু এটাই শেষ না, তার অনেকগুলো অসুখ আছে, লিভার সিরোসিস, আর্থারাইটিস, হার্ট ডিজিস আছে। তার জন্য দরকার উন্নত চিকিৎসা, উন্নত মেডিকেল সেন্টার যা আমাদের দেশে নেই। আমাদের চিকিৎসকেরা তাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন তাই উন্নত মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া দরকার, যা বিদেশে আছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা বারবার অনুরোধ করেছি, আন্দোলন করেছি, কর্মসূচি দিয়েছি, আমরা সোজা কথা বলতে চাই, কালকে ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন ‘সরকার কোনো দায় নেবে না’। আল্লাহ না করুক আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার যদি কোনো অঘটন ঘটে, তাহলে সরকারকেই এর দায় নিতে হবে।’ সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের শেষ কথা- অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। অন্যথায় তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, কারণ আপনারা এদেশের মানুষের সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু লুটেপুটে নেওয়ার জন্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। কত টাকার মামলা? ২কোটি ৩৩লাখ টাকার মামলা। সেই মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একইসঙ্গে সেই টাকা কোথাও যায়নি। কেউ তসরুফও করেনি। পুরো টাকা ব্যাংকে আছে। যা এখন প্রায় ৮কোটি হয়েছে। মূল কারণটা ছিল খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া। তাকে রাজনীতি করতে না দেওয়া। সেই কারণে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, দুদককে নিয়ন্ত্রণ করে দেশনেত্রীকে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছেন।’ জীবনে কারও কাছে কখনও মাথানত করিনি- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের সমালোচনায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “স্বৈরাচার এরশাদ যখন ক্ষমতা দখল করে ৮২ সালে, তখন তিনি বলেছিলেন- ‘উই আর নট আনহ্যাপি’- আমরা অখুশি নই। আবার এক-এগারোর অবৈধ সরকারের সময় যখন ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল, তখন বিমানবন্দরে আপনি ঘোষণা দিয়েছিলেন এই সেনা সমর্থিত অবৈধ সরকারের সমস্ত কার্যক্রম আপনি বৈধ করে দেবেন। আমাদের মেমোরি এখনও এত ‘শর্ট’ হয়নি। এজন্য আমরা বলি, আপনি বরাবরই আঁতাত করে ক্ষমতায় এসেছেন, আপনারা বরাবরই ওই শক্তির সঙ্গে আঁতাত করেছেন যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান করে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে।’ গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের মাধ্যমে একটি নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, যেখানে জনগণ তাদের পছন্দমতো মানুষদের নির্বাচিত করবেন। পছন্দমতো পার্টি নির্বাচন করে সংসদ গঠন করবেন। এর বাইরে কোনো কিছুই মেনে নিতে এদেশের মানুষ প্রস্তুত নয়, মানবে না।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এখনও সময় আছে, এখনও বাঁচতে পারবেন, সময় আছে কিছুটা রক্ষা পেতে পারেন। এরপর আর পালাবার সময় পাবেন না। পরিষ্কার করে বলতে চাই সমস্ত রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। দেশের সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, যে দুর্বার গণআন্দোলন শুরু হবে তার মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।’ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় শুরু হওয়া সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর বিএনপি নেতা নবি উল্লা নবী, ফখরুল ইসলাম রবিন প্রমুখ। এর আগে সকাল ৯টা থেকে মহানগরের বিভিন্ন থানা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

সাহস২৪.কম/এআর/এসটি/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত