ভোক্তা অধিকার ‘বিভাগ’ চায় ক্যাব

প্রকাশ : ২৩ মে ২০২২, ২০:০৯

সাহস ডেস্ক

ভোক্তা অধিদপ্তর ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে যথেষ্ট নয়- ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণের জন্য ‘ভোক্তা অধিকার বিভাগ’ দাবি করেছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে ‘ভোক্তা অধিকার বিভাগ’ উন্নীত করে নিশ্চিতভাবে ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য সরকারের যথাযথ প্রশাসন তার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করবে বলে আশ্বাস জানায় সংস্থাটি। সোমবার (২৩ মে) দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সে আয়োজিত ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। বক্তব্য রাখেন ক্যাবের মুখপাত্র ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম সামসুল আলম প্রমুখ।

ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে বড় দিন উপলক্ষে এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতে পূজার সময় মূল্য ছাড়ের রীতি চলমান। অথচ তার বিপরীত চিত্র আমাদের দেশে। দাম কমা তো দূরের কথা ভিন্ন মাত্রায় প্রতারণা করে অতি মুনাফা লাভে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাদের অপতৎপরতা ঠেকাতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন বাজার অভিযান পরিচালনা করছে। অপরাধের জন্য আদায় করা হচ্ছে জরিমানা। কোথাও কোথাও করা হচ্ছে সতর্ক। কিন্তু তারপরও বন্ধ হচ্ছে না অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা।

তিনি বলেন, অব্যাহত প্রতারণার সঙ্গে নতুন করে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যে ‘ঘষাঘষি’ করে নতুন মূল্য লিখে দেওয়া। বিভিন্ন উৎসব, বিশেষ করে ঈদ সামনে রেখে পণ্যের মূল্যের হরহামেশা পরিবর্তন করা। একই পণ্যের ওপর একবার নয়, দুবার নয়, তিনবার পরিবর্তন করে নতুন মূল্য স্টিকার লাগানোর ঘটনা ঘটছে। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে গ্রাহকদের কষ্টের টাকার এই জলাঞ্জলি কষ্টের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ক্যাব সহ সভাপতি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। তারপরও রমজানকে কেন্দ্র করে অনেক মুসলিম দেশে পণ্যের দাম কমিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে রমজান মাস এলেই খাদ্য-পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ে। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীর আবির্ভাবও ঘটে। বাজারমূল্যের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রতিটি পণ্যের ক্রয় এবং বিক্রয় মূল্যের চার্ট ঝুলিয়ে রাখার জন্য ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা অনেকেই মানছেন না।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসা শুধুমাত্র একটি অর্থ উপার্জনের উপায় নয়, এটা একটি সেবাও বটে। পণ্যের মূল্য ঘষামাজা করে অতিমুনাফা আদায়ে সচেষ্ট হওয়াকে ব্যবসা বলা যাবে না। এটা প্রতারণা আর এই প্রতারণা ফৌজদারি অপরাধও বটে। তবে আইন দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সব সময় সম্ভব না ও হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন অতিমুনাফালোভী, প্রতারক, মজুতকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সামাজিকভাবে বয়কট করা। তাহলেই হয়ত ব্যবসা-বাণিজ্যে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত হবে।

সেমিনারে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা ভোক্তা মন্ত্রণালয় চাচ্ছিলাম। ভোক্তা অধিদপ্তর ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে যথেষ্ট নয়, অন্তত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে আপাতত ‘ভোক্তা অধিকার বিভাগ’ চাই। নিশ্চিতভাবে ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য সরকারের পলিসি বিভাগ উদ্যোগ নেবে এবং সরকারের যথাযথ প্রশাসন তার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করবে। দেশে এমন কোনো খাত নেই যেখানে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দেয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করে ড. এম সামসুল আলম বলেন, ‘আমরা ভোক্তারা অনেকটা বন্দী হয়ে গেছি। এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দেশের আইন, সরকারি প্রতিষ্ঠান কেউ-ই সফল নয়।’ 

ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করলেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ফৌজদারি মামলা করার এখতিয়ার নেই। কিন্তু ক্যাবের মামলা করার অধিকার রয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। তা ছাড়া ভোক্তাকে ঠকানো প্রতারণা শামিল বলে যে কেউ অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করতে পারে বলেও জানান বক্তারা।

সাহস২৪/এআর/এসটি/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত