সকল প্রতিষ্ঠানে থাকবে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ২১:৩০

সাহস ডেস্ক

সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিম্বা যত্রতত্র আগুন লাগার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যকার ঘটনা। হাতে গুণে হিসেব করলে সেটা আট কিম্বা দশের কোটায় দাঁড়ালেও বাস্তবে গত এক বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২২ হাজার ২২২টি। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এর তথ্য বলছে, ছোটদের আগুন নিয়ে খেলা, যন্ত্রাংশের সংঘর্ষ, ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগ ও বৈদ্যুতিক যন্ত্র, সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো, খোলা বাতির ব্যবহার, চুলার আগুন, মিস ফায়ার, চিমনি, রাসায়নিক বিক্রিয়া, বাজি পোড়ানো ইত্যাদি কারণে আগুন লেগে থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনগণের অসচেতনতা ও পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সুব্যবস্থা না থাকার ফলে ঘটছে এমন বিষয়। রাষ্ট্রীয় তদারকির স্বচ্ছতা ও ঠিকঠাক পরিচালিত হলে কমে আসতে পারে বৃহৎ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, শিল্প কলকারখানাসহ প্রতিটি ভবন, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন, শপিং মল, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, প্রতিটি ক্ষেত্রেই অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকাটা অত্যন্ত জরুরী।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিগত কয়েক বছরের তথ্যে উঠে আসে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২০২১ সালেই বেশি ঘটেছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সে অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমানটিও বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০২০ সালের দুর্ঘটনার চেয়ে ঘটেছে ১ হাজার ৪৯টি বেশি। এক বছরে বেড়েছে ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত এক বছরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অধিক ক্ষতি হয়েছে মোট ৩৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৯০ টাকার। এসব অগ্নিকাণ্ডের ফলে নিহত হন ২ হাজার ৫৮০ জন। আহত হয় ১১ হাজার ৯৯৯ জন।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনার মধ্যে এ বছরে রাজধানীর নীলক্ষেতে বইয়ের বাজারে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডে ৩০-৩৫টির বেশি দোকান পুড়ে যাওয়া। প্রতিটি দোকানে অন্তত ২-৩ লাখ টাকার বই ছাই হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় সে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নাজিরাবাজার জুতার ফ্যাক্টরিতে আগুন, সুরিটোলায় জুতার গোডাউনে, বাংলামোটর আর কে ভবনে আগুন, রায়েরবাগ মশার কয়েল ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগে। একই মাসে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা-বরগুনা লঞ্চে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ৪৫ জন নিহত হয়। একই বছরের এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২ হাজার ৮৬১টি ঘটনায় ঐ সময় ১৫০ জন প্রাণ হারায়। আহত হয় ১ হাজারের বেশি মানুষ। রাজধানীস্থ বিভাগকে কেন্দ্র করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অগুণতি। আবাসিক এলাকায় কারখানা স্থাপন, দাহ্যপদার্থের বহুল ব্যবহার আর সামাজিক অসচেতনতা অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য। সবচেয়ে কম অগ্নিকাণ্ড ঘটে বরিশাল বিভাগে। অগ্নিনির্বাপণ বিশেষজ্ঞদের মতে, উদাসীনতা আর অসচেতনতাই আগুন লাগার মূল কারণ। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত জ্ঞান না রেখে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে শহরগুলোর। বড় ছোট সব অগ্নিকাণ্ডেই দেখা গেছে নিরাপত্তা বিষয়ক অবহেলা। নিশ্চিতকরণের বিষয়টি মাথায় না রাখলে ভবিষ্যতে এমন আরও সংকটের মুখোমুখি হতে হবে বলেও মনে করেন সমালোচকেরা। শহরে শহরে নির্মাণ হচ্ছে সুউচ্চ ভবন। তবে সে ক্ষেত্রেও উপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা। তবে বাসাবাড়ির চুলা আর শর্ট সার্কিটের আগুনের বিষয়ে সচেতন হলে অনেকাংশে এ সমস্যা কমে আসবে বলে মনে করে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল এই পাঁচ বছরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে মোট ৩ হাজার ৯৩ জন নিহত এবং আহত হয় ১৩ হাজার ৮৬৩ জন। ২০১৭ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে মোট ১৮ হাজার ১০৫টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫১টি ঘটে ঢাকাতেই। ক্ষতি হয় ২৫৭ কোটি ২৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮৬ টাকা। এসব অগ্নিকাণ্ডে ২৬৯ জন আহত ও নিহত হন ৪৫ জন। ২০২১ সালের ঘটনায় ক্ষতি হয় মোট ৩৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৯০ টাকার অধিক। পাঁচ বছরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে ২২ শতাংশ। এ সময় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে ৭৩ কোটি ৯ লাখ ৫১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকায়। 

এ বিষয়ে শিল্প কলকারখানাসহ প্রতিটি ভবন, যেখানে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন, শপিং মল, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, প্রতিটি ক্ষেত্রেই অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এ জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, যারা আমাদের উন্নয়ন কতৃপক্ষ এবং যারা স্থাপত্যবিদ বা প্রকৌশলী যারা ডিজাইন বা সবকিছু করেন তাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে নতুন কোন প্রকল্প গ্রহণ করলে সেখানে অগ্নিনির্বাপনের আধুনিক ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত করতে হবে পাশাপাশি কখনও আগুন লেগে গেলে সেটা নির্বাপনে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, জলাধারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।

জলাধার ভরাট করে বক্স কালভার্ট করাটা ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি ২০০৯ সালে বসুন্ধরা শপিং মলের টাওয়ার অংশে লাগা অগ্নিকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, এক সময় এই পাস্থপথের পুরো এলাকাটাই বিল ছিল, যেখানে বসুন্ধরা শপিং মল তৈরি হয়েছে। আজকে সেখানকার জলাধার ভরাট করে বক্স কালভার্ট করে পুরো এলাকার জলাধার বিলীন করে ফেলায় সেদিনের অগ্নিকাণ্ডে আগুন নেভানোর জন্য হোটেল সোনারগাঁও সুইমিং পুল থেকে দমকল কর্মীদের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়েছে। দুর্গম এলাকায় যেন দমকল বাহিনীর গাড়ি পৌঁছতে পারে, সেজন্য রাস্তার প্রশস্ততার পাশাপাশি পানির সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন তিনি।

দেশের দমকল বাহিনীর এখন ২০ তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপন সক্ষমতা রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্রমেই এই সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে বহুতল ভবন নির্মাণের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে উদ্ধার পাবার সম্ভাবনা সম্পর্কে সকলকে নিশ্চিত হয়েই নির্মাণ পরিকল্পনার পরামর্শ দেন। এজন্য নিয়মিত অগ্নিনির্বাপন মহড়ার আয়োজন এবং বহুতল ভবনে খোলা বারান্দা রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত