‘মা যেমন রুগ্ন সন্তানকে সুস্থ করে, তেমনি বঙ্গবন্ধুও শিল্পকে জাতীয়করণ করে’

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২২, ১৪:০৭

সাহস ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি মা যেমন তার রুগ্ন সন্তানকে সেবা-শুশ্রুষা করে সুস্থ করে তোলে, ঠিক সেইভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পকে জাতীয়করণ করে, নতুনভাবে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে চালু করার পদক্ষেপ নেন।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব হাতে নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি করে ৫৯৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়। তার কারণ যুদ্ধ চলাকালে এসব শিল্পের অধিকাংশ মালিক ছিল পাকিস্তানিরা। এগুলো পরিত্যক্ত রেখে তারা এ দেশ থেকে চলে যায়। ফলে এগুলো সম্পূর্ণ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম ছিল।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ারি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন; বাংলাদেশ সুগার মিলস করপোরেশন ও বাংলাদেশ ফুড অ্যান্ড অ্যালাইড করপোরেশন; বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিইটউট; বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন; বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন; বাংলাদেশ কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) এবং বিএসটিআই এর কার্যক্রম শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি এ দেশটাকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে জাতিসংঘে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সেই স্বীকৃতি অর্জন করতে আমরা সক্ষম হই, তার একমাত্র কারণ হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দক্ষ এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব বাংলাদেশের দায়িত্বে ছিল বলেই। আমাদের দুর্ভাগ্য ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর এসব অগ্রযাত্রা থমকে যায়। সংবিধান লঙ্ঘন করে, মার্শাল ল' জারি করে অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা আসলে এ দেশের উন্নতি চায়নি। বরং স্বাধীনতাবিরোধী এবং জাতির পিতাকে সপরিবারে যারা হত্যা করেছিল তাদেরকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে তাদের মন মানসকিতা ছিল স্বাধীনতাবিরোধী। যে কারণে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমাদের লক্ষ্য ছিল কীভাবে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসবো। অপরদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি আমরা করবো। আমাদের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়ন আমাদের প্রয়োজন। শিল্পায়ন যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করে, পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। আমরা অনেকগুলো ক্ষেত্র বেসরকারি খাতে তুলে দেই। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে টেলিভিশন, রেডিও, ব্যাংক-বীমা, বিমান, হেলিকপ্টার সব কিছু বেসরকারি খাতে যাতে তারা পরিচালনা করতে পারে সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দেই। ফলে আমাদের দেশে বিনিয়োগও আসতে শুরু করে।

শেখ হাসিনা বলেন, যখন আমরা ৯৬ সালে সরকার গঠন করি, তখন সমগ্র এশিয়াতে অর্থনৈতিক মন্দা ছিল। আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ—৯৭ সালে ঘূর্ণিঝড় হয়, ৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়। সেই বন্যাও আমরা মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। দেশকে প্রথম খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। অনেকে মনে করতো এ দেশ কিছুই অগ্রগতি করতে পারবে না, আমরা অনেক অগ্রগতি করি। মাত্র ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো ৯৬ সালে। আমরা ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছিলাম।

তৃণমূল পর্যায়ে যেন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়, তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ যেন সুযোগ-সুবিধা পায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে লক্ষ্য নিয়ে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের দিকে নজর দিয়েছিলেন। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশব্যাপী আমরা পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার ঘটাচ্ছি। পরিবেশ রক্ষা করা এখন সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ সব থেকে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শিল্প কলকারখানা থেকে শুরু করে যত প্রতিষ্ঠান আমরা তৈরি করছি, সেটা পরিবেশবান্ধব যাতে হয় তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এমনকি গার্মেন্টস শিল্পের যেগুলো গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি সারা পৃথিবীর ১০টির মধ্যে ৭টি এখন বাংলাদেশে। পরিবেশ-প্রতিবেশের প্রতি লক্ষ রেখেই আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ঘোড়াশাল এবং পলাশ দুটি পুরাতন ইউরিয়া সার কারখানার স্থলে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর, শক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানা 'ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা' স্থাপনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করি। নতুন এই সার কারখানায় দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন, বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া উৎপাদন বাড়ানো হবে। এই প্রকল্পটিতে জাপান ও চীন সরকার ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে।

করোনাভাইরাস সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি করেছে। খাদ্যের অভাব সৃষ্টি করেছে। তবে বাংলাদেশে আমাদের নেওয়া উদ্যোগ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ ও নগদ অর্থ সহায়তার ফলে আমরা অর্থনীতির গতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। করোনার সময়ও আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জন ধরে রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে—বলেন প্রধানমন্ত্রী।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত