অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের জন্য ৮ বিভাগে স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১৩:৩৯

সাহস ডেস্ক

অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ৮ বিভাগে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২ এপ্রিল) সকালে ১৫তম বিশ্ব অটিজম সচেতনা দিবস ২০২২ উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এ কথা জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি প্রত্যেকের ওই ধরনের চিন্তা, বাবা-মা ওইভাবে ভাবে যদি সে না থাকে তার শিশুর কী হবে। সে চিন্তা আমাদেরও আছে। সে জন্য আমাদের একটা উদ্যোগ আছে, আমরা যে ট্রাস্ট গঠন করেছি তার মাধ্যমে যদি আমরা এমন ব্যবস্থা করে ফেলি যখন কোনো গার্ডিয়ান থাকবে না, দেখা-শোনার কেউ থাকবে না তখন তারা সেখানে বসবাস করতে পারে। ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা এ ধরনের হোস্টেল বা ডরমিটরি নির্মাণ করতে পারি।

তিনি বলেন, আর তাদের সুরক্ষা বা দেখাশোনার জন্য লোক থাকবে। সেখানে আপনারা যারা বিত্তশালী আছেন, ডোনেশন দিতে পারবেন। যার মাধ্যমে ওটা চলবে। আর সরকারের পক্ষ থেকে অন্তত আমি যতক্ষণ আছি, এটুকু বলতে পারি সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করবো। শুধু ঢাকা শহর না, প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহরে বা বড় বড় শহরগুলোতে এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের নেওয়া উচিত। কারণ এটা বাস্তবতা বাবা-মা না থাকলে তাদের কে দেখবে? সবাই তো আর আন্তরিকতার সঙ্গে দেখে না। কিছু কিছু মানুষ এত বেশি স্বার্থপর হয়ে যায়, নিজের বাবা-মাকেও দেখে না। সম্পত্তি নিয়েও মারামারি করে। সে ক্ষেত্রে এই শিশুদের কে দেখবে! সে জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা আমরা করবো। চিন্তা-ভাবনা আছে, অবশ্যই আমরা করবো।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পরে আমাদের ১৯টি জেলা ছিল বড়, সব জেলায় সমাজ কল্যাণের জন্য বিশাল বিশাল জায়গা দিয়ে গিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। সেখানে এতিমখানা বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করতে চাই। প্রতিবন্ধী ও অটিজমের শিকার শিশুদের যত্ন নেওয়া সব সুস্থ মানুষের দায়িত্ব। কেউ যেন এদের অবহেলা না করে। আমরা ছোটবেলায় শিখেছি, কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না। এটা যেন ছোটবেলা থেকেই শিশুরা শেখে। আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এই এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে আমাদের সর্বস্তরের মানুষের জন্য। সবাই সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত জীবন পাবে। সুন্দরভাবে বাঁচবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা কোনো একটা স্থায়ী আবাসন বা কর্মসংস্থান করা যায় সে ধরনের প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুলবো। সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে বলবো, এর ওপর একটি প্রকল্প নিয়ে আসতে। প্রথমে ৮টি বিভাগে করে দেবো, পর্যায়ক্রমে প্রতি জেলায় আমরা করে দেবো। এ ক্ষেত্রে যারা বিত্তশালী আছেন তাদের আমি বলবো, অনেক টাকা-পয়সা অনেকের হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনীতি যত বেশি শক্তিশালী হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। গ্রামের মানুষ আর্থিক সচ্ছলতা পাচ্ছে। কিছু এখানে ব্যয় করলে সেটা দেশের কাজে লাগবে। যথাযথ কাজে লাগবে। ট্রাস্টের মাধ্যমে এ ধরনের আবাসন ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সেইসঙ্গে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যাতে করে ইনশাল্লাহ আমি করে দেবো।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি সরকারে আসার পর থেকে সব সময় এ দেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে সে সময় অটিজম সম্পর্কে সচেতনতাটা আমাদের ছিল না। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের জন্য আমরা তখন ব্যবস্থা নিই। ১৯৯৯ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করি এবং সেটা পরিচালনার জন্য সিড মানিও আমি দিয়েছিলাম। নিউরো ডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম বিষয়ে জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় দেশে ও বিদেশে অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত তার কাছ থেকেই এটা শিখেছি-জেনেছি। সে যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো, তখন আমি যেতাম। সে সময় কিছুটা ধারণা পাই।

সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ২০১৪ সালে নিউরো-ডেভলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করি। ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের অটিজমসহ নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রমও আমরা গ্রহণ করি। এ ট্রাস্টকে ১৪৩ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছি। ২০১৭ থেকে এই ট্রাস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০১ জনকে ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এনডিডি ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমাও চালু করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে, এটা কার্যকর হলে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আমরা প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০১৯ প্রণয়ন করেছি। নীতিমালা অনুযায়ী, বিশেষ স্কুল স্থাপন ও অনুমোদনের কার্যক্রম চলমান আছে। সারা দেশে ৪৭টি বিশেষ বিদ্যালয় সরকারি অনুদানে পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ কারিকুলামও তৈরি হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত