বৈদ্যুতিক ফাঁদে চিতা বাঘ হত্যা, বাঁশে ঝুলিয়ে উল্লাস !

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২২, ১৬:২০

সাহস ডেস্ক

মুরগির খামারে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক ফাঁদের তার স্পর্শ করে ছিটকে পড়ে। আহত হয়ে পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু মানুষের কবলে প্রাণিটির শেষ রক্ষা হয়নি। সবাই ঝাপিয়ে পড়ে চিতা বাঘটিকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে  হত্যা করে। 

১৮ মার্চ (শুক্রবার) ভোরে রাতে নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়া এলাকায় প্রাণীটিকে হত্যা করা হয়। এলাকার মুরগীর খামারি অলিয়ার রহমান খামারের চারদিকে বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে রেখেছিলেন। 

চিতাবাঘ (Panthera pardus) বা গুলবাঘ ফেলিডি গোত্রের অন্তর্গত এক প্রজাতির শ্বাপদ। সাব-সাহারান আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চমৎকার এ প্রাণীটি দেখা যায়। আবাসস্থল ধ্বংস, শিকারের অভাব আর চোরাশিকারের ফলে সারা দুনিয়ায় প্রজাতিটি আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে। সে কারণে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা আইইউসিএন চিতাবাঘকে প্রায়-বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। হংকং, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, সিরিয়া, লিবিয়া ও তিউনিসিয়ায় চিতাবাঘ আজ আঞ্চলিকভাবে বিলুপ্ত। প্যানথেরা গণের মোট চারটি বড় বিড়ালের মধ্যে চিতাবাঘই সবচেয়ে ছোট; অন্য তিনটি হল বাঘ, সিংহ ও জাগুয়ার। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ চিতা বাঘ সংরক্ষিত প্রাণি। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতিকরা ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চিতাবাঘ দুটি ভোররাতে মুরগীর খামারের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে। খামারের কয়েকজন প্রাণী দুটি দেখতে পায়। তারা খামার ঘেরা বৈদ্যুতিক তারের (গুনা) লাইনটি অন করে দেয়। চিতা বাঘটি বিদ্যুতে তার স্পর্শ করে ছিটকে পড়ে। আহত হয়ে পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু মানুষের কবলে প্রাণিটির শেষ রক্ষা হয়নি। এরপর সবাই ঝাপিয়ে পড়ে চিতা বাঘটিকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে  হত্যা করে। চিতা বাঘ এক জোড়া ছিল। প্রাণিটির মরদেহ দড়িতে বেঁধে বাঁশের আড়া বানিয়ে  ঝুলিয়ে রাখা হয়। দুটির এখনও একটি গম ক্ষেতের ভিতর প্রাণ ভয়ে লুকিয়ে রয়েছে। ওদিকে এলাকাবাসি এখনও লাঠিসোটা হাতে গম ক্ষেতে পাহাড়া দিচ্ছে। 
 
এ বিষয়ে নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জেসমিন নাহার জানান, ঘটনাস্থলে বন বিভাগের লোক গিয়েছে। ঘটনাটি দেখে ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা গণমাধ্যমকে জানান, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) চিতা বাঘকে বাংলাদেশের জন্য অতিবিপন্ন প্রাণির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতিকরা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়ার মতো নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গত ১৮ বছরে ৭টি এবং সর্বশেষ এই একটি নিয়ে গত ২০ বছরে দেশে মোট ৮টি চিতাবাঘ হত্যা করা হয়েছে। এর সবগুলোই উত্তরবঙ্গে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে লোকালয়ে চলে আসা চিতাবাঘ বনে ফিরিয়ে দেওয়ার যে ব্যবস্থাপনা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে, তার আঙ্গিকে আমাদের দেশের জন্য উপযোগী এরূপ একটি ব্যবস্থাপনা কৌশল বাস্তবায়ন অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।

সাহস২৪.কম/এবি.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত