দেশে খাদ্য উৎপাদন ও শিল্পায়ন দুটোই প্রয়োজন

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:৩৬ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:৪৫

অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে খাদ্য উৎপাদন ও শিল্পায়ন দুটোই প্রয়োজন। এজন্য সুনির্দিষ্ট জায়গায় শিল্পায়ন করতে হবে, যাতে উৎপাদন ব্যহত না হয়। এজন্য সারাদেশে ১০০টি শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে। বিসিকের শিল্পাঞ্চল সম্প্রসারিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে শিল্পায়ন করতে হবে। তাতে বর্জ্যব্যবস্থাপনাও ঠিক থাকবে। পরিবেশ নষ্ট হবে না।

রবিবার (৫ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘৯ম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা-২০২১’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই মেলার লক্ষ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) সহায়তা করা এবং কোভিড-১৯ মহামারী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বাজার উন্নত করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যত্রতত্র শিল্প-কারখানা করা যাবে না। কৃষিজমি রক্ষা করতে। কোভিড পরিস্থিতির পর বিশ্বের অনেক দেশ খাদ্য সংকটে ভুগছে, যদিও সে সমস্যা বাংলাদেশে নেই। তবুও চাষের জমি রক্ষা করতে হবে। খাদ্য চাহিদা কখনও কমবে না বরং বাড়বে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি উদ্যোক্তা হয় তবে সে কোথায় কারখানা করবে সেটা ঠিক করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিন। নিজস্ব জায়গায় করলে, সেখানে কীভাবে বর্জ্যব্যবস্থাপনা করবে সেটা ভালোভাবে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, অঞ্চলভিত্তিক শিল্পকে কাজে লাগাতে হবে। যে অঞ্চলে যে পণ্য হচ্ছে সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। ওই অঞ্চলে সেই ধরনের শিল্পনগরী করতে হবে। কোন দেশে কোন ধরনের পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সেটা দেশের কোথায় থেকে কীভাবে পূরণ করা সম্ভব সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কৃষি ও খাদ্যপ্রক্রিয়াজাত শিল্পকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। মাছ-সবজি উৎপাদন অনেক বাড়িয়েছি। এজন্য উদ্বৃত্ত সম্পদকে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশি বাজার ধরতে হবে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা ইশতেহারে ২০২১ সালে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার কথা বলেছিলাম। আজ সেই সময় আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমরা এমডিজি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি। এসডিজি করছি। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। সারাবিশ্বে সে মর্যাদা নিয়ে চলবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমৃদ্ধ ও টেকসই অর্থনীতির ভিত গড়তে হলে দেশে শ্রমঘন ও স্বল্পপুঁজির এসএমই উদ্যোক্তা তৈরি করা প্রয়োজন। সবধরনের শিল্পই সমগ্র বাংলাদেশে গড়ে তুলতে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ এসএমই উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর। জিডিপিতে বর্তমান এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩২ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্র আমাদের ‘এসএমই নীতিমালা ২০১৯’ এ নির্ধারণ করেছি। সেভাবেই উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা দরকার।

তিনি বলেন, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, টেকসই শিল্পায়ন ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে ‘এসএমই নীতিমালা ২০১৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় শিল্পনীতি ও এসএমই নীতিমালার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামে-গঞ্জে বা তৃণমূল পর্যায়ে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে ও বিদ্যমান এসএমই ক্লাস্টারসমূহ আরও গতিময় হবে। রূপকল্প ২০২১, এসডিজি ২০৩০ এবং রূপকল্প ২০৪১ অর্জনে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে আমি বিশ্বাস করি।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন সবকিছু ঘরে বসে জানা যাচ্ছে। একটু স্ব-উদ্যোগে কাজ করলে সকলে উদ্যোক্তা হতে পারবে। সে ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী ব্যাংকসহ বহু প্রতিষ্ঠান ঋণ দিচ্ছে। আপনারা উদ্যোগ নিন। নিজেরা উদ্যোক্তা হোন। অন্যকে কর্মসংস্থান করে দিন। এটা তরুণ সমাজের কাছে প্রত্যাশা করি। এজন্য সরকার সবধরনের সহায়তা দেবে।

করোনাভাইরাসের কারণে ১৯ মাস বিরতির পর বার্ষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই মেলা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। প্রথমবারের মতো ১০টি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) মেলায় অংশ নিচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় সারাদেশ থেকে বাছাইকৃত ৩শ’ এসএমই প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে, যাদের প্রায় ৬০ শতাংশ নারী  উদ্যোক্তা।

প্রদর্শনীতে যেসব পণ্য থাকবে তার মধ্যে রয়েছে পাট, পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হস্তশিল্প, বেতের পণ্য, মৃৎশিল্প, সিরামিক, কৃত্রিম ফুল, গহনা, বুটিকস, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, জামদানি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি। এছাড়া লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, প্লাস্টিক, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল, এগ্রো মেশিনারি এবং আইটি ও কুরিয়ার সেক্টরের পণ্যও মেলায় থাকবে।

এছাড়াও, ৮ দিনব্যাপী মেলায় অর্থায়ন প্রক্রিয়া, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং ৪র্থ শিল্প বিপ্লব এবং ক্লাস্টার উন্নয়নের উপর চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিশেষ অতিথি শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন  জাতীয় এসএমই পুরস্কার ২০২১ বিজয়ী চার উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেন।

বিশেষ অতিথি এবং আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. মো. মাসুদুর রহমান বক্তৃতা করেন।