মেঘনা নদীর ভাঙণ তাণ্ডব: ৩ যুগে গায়েব ৩৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

তলিয়ে গেল রামগতির চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২১, ২০:৩৭

মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দ্বিতল ভবনের বিদ্যালয়টিকে গিলে খেয়েছে রাক্ষুসে মেঘনা। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রায় দুইশত শিক্ষার্থীর পড়াশোনা।

ভয়াবহ ভাঙণের মুখে পড়ায় বিদ্যালয়ের চেয়ার-টেবিল অন্যত্র সরিয়ে রাখা গেলেও ভাঙণ থেকে রক্ষা করা যায়নি বিদ্যালয়টিকে। তবে গত বছর থেকে 'জিও ব্যাগ ডাম্পি' করে বিদ্যালয়টি রক্ষা করা চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

সারা বছর ধরে রামগতির মেঘনার ভাঙণ অব্যাহত থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর থেকে নদী আরও উত্তাল হয়ে উঠে। জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় ভয়াবহ রূপ নেয় এ ভাঙণের। গত তিন যুগ ধরে ভাঙণে বিলীন হয়ে গেছে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এদিকে, বর্ষা শুরু হওয়ায় ভাঙণ আরও বেড়ে যায়। গত কয়েকদিনের ভাঙণে মেঘনা ধেয়ে আসে বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গনে। মঙ্গলবারের তীব্র ভাঙণে সদ্যনির্মিত বিদ্যালয় ভবনটি দুমড়ে-মুচড়ে নদীতে পড়ে বিলীন হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতি দেখে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

একইভাবে গত বছর পার্শ্ববর্তী কমলনগর উপজেলার চরফলকন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীল ভবনসহ তিনটি বিদ্যালয় নদী গর্ভে হারিয়ে যায়।

চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। নদীতে বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে সাময়িকভাবে স্থানীয় একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। এদিকে, কোনোভাবেই যাতে শিক্ষার্থী ঝরে না পড়ে এ ব্যাপারে শিক্ষকরা ভূমিকা রাখবেন বলে জানিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম সাহস২৪কে বলেন, হঠাৎ ভাঙণ ভয়াবহ রূপ নেয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই ভাঙণ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে চেয়ার-টেবিল, আলমারীসহ মালপত্র স্থানীয় বালুর চর উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে রক্ষা করা হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আহসান সাহস২৪কে জানান, বিদ্যালয়ের কার্যক্রম আপাতত পাশ্ববর্তী একটি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্রুত বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, গত বছরের বর্ষায় বিদ্যালয়টি ভাঙণের মুখে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় রক্ষায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। এবারের বর্ষায় ভাঙণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে গেছে। 

স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, রামগতি ও কমলনগরকে মেঘনা নদী ভাঙণ থেকে রক্ষায় ১ জুন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য তিন হাজার ৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। জরুরী ভিত্তিতে অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ শুরু করা ও কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করার লক্ষে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সংসদে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন বলেও জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত