রোজিনা গ্রেপ্তার: জব্দ তালিকার সঙ্গে মিল নেই এজাহারের

প্রকাশ : ২১ মে ২০২১, ১৭:৫০

সাহস ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে যে ধরনের নথির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে জব্দ করা জিনিসের কোন মিল নেই। জব্দ তালিকায় সরাসরি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ‘অপ্রকাশযোগ্য চুক্তি’র কোনো নথি নেই। যা মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে।

মঙ্গলবার (১৮ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে রোজিনা ইসলামের পক্ষে শুনানির পর প্রথম আলোর নিয়োজিত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেছিলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে যে ডকুমেন্টের কথা বলা হয়েছে, তার কোনো বর্ণনা এজাহারে নেই। যে জব্দ তালিকা আদালতে হাজির করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ডকুমেন্টমগুলো আসামির কাছ থেকে নয় বরং একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজেই উপস্থাপন করেছেন। তাই যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মানহানিকর এবং আপত্তিকর।

জব্দ তালিকায় চারটি নথির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পাঠানো দুই পাতার একটি চিঠি। দ্বিতীয়টি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় ব্যবহৃত চিকিৎসা সামগ্রী কেনার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোর (সিএমএসডি) পরিচালকের ৫৬ পাতার একটি প্রস্তাবনা। এ চিঠি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হচ্ছিল।

জব্দ তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য তৈরি করা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত দুই পাতার একটি সারসংক্ষেপ। চতুর্থ ও শেষ নথি হিসেবে আছে করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির অনুমোদন বিষয়ক দুই পাতার একটি ফটোকপি।

কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন, তার এজাহারে রোজিনার বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে এমন নথি সরানোর অভিযোগ আনা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের টিকা কেনা/সংগ্রহ সংক্রান্ত আলোচনা এবং খসড়া সমঝোতা স্মারক ও অ-প্রকাশ্য চুক্তি প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষগুলোর মাঝে প্রতিনিয়ত চিঠি ও ই-মেইল যোগাযোগ হচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে।

কিন্তু, জব্দ তালিকায় টিকা সংক্রান্ত দুই পাতার ফটোকপিটির কথাই শুধু উল্লেখ আছে। ওই তালিকার তথ্য অনুসারে, রোজিনার কাছ থেকে ‘জব্দ করা’ সবকিছু আসলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের জিম্মা থেকে উদ্ধার করা হয়।

এর আগে গত ১৮ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে, এমন নথি সরিয়েছেন রোজিনা।

মন্ত্রী আরও বলেন, তিনি (রোজিনা) দুর্নীতির ব্যাপারে যেসব রিপোর্টিং করেছেন, সেজন্য তো গতকালের ঘটনাটি নয়। সেখানে একজন লোক সরকারি ডকুমেন্ট নিয়ে যাচ্ছে, ফাইলসহ নিয়ে যাচ্ছে, ছবি তুলছে, রাষ্ট্রীয় সিক্রেট ডকুমেন্ট। যে ডকুমেন্টগুলো ছিল টিকা সংক্রান্ত। স্টেট লেভেলে আমরা কথা দিয়েছি এগুলো আমরা কোথাও বলবো না। সেগুলো যদি কেউ নেয়, তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমি যতদূর জানি, ওই সময় রুমে কেউ ছিল না, খালি রুমে উনি ঢুকছেন।

রোজিনার জামিন আবেদনের শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, রোজিনা চীন ও রাশিয়া সম্পর্কিত গোপন নথি নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং এগুলো তার শরীরের ‘বিশেষ স্থানে’ লুকানো ছিল।

সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, তিনি সংবেদনশীল তথ্য চুরি করেছেন। নারী হলেও বাংলাদেশকে তিনি বিব্রত করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত