‘গ্রন্থমেলা’: লোকসান গুনছেন প্রকাশকরা

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৪:১৫

সাহস ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে চলতি বছরের বইমেলা ছিল অন্যান্য বছরের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। বইমেলায় স্টল এবং বই থাকলেও দর্শনার্থী এবং বই কেনার অগ্রহী মানুষ খুবই কম। সম্প্রতি দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকায় এটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ বইমেলার পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে, যে কারণে প্রকাশকরা বিশাল লোকসানের আংশঙ্কায় রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সুপারিশ উপেক্ষা করে বাংলা একাডেমি বইমেলার আয়োজন করেছে।

মেলার বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছে, খুব কমই বই বিক্রি হয়েছে। বেশিরভাগ লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন, বই কেনার জন্য নয়। দর্শনার্থী, লেখক এবং প্রকাশকদের সাধারণ ভিড় অনুপস্থিত। বিক্রয় হতাশাজনক।

ট্রয়য়ের প্রকাশক মাধব চন্দ্র দাস বইমেলার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এখানে কোনো পাঠক নেই। আপনি দেখেন বেশিরভাগ লোকই বন্ধু, আত্মীয় এবং নতুন লেখকদের পরিচিত। অন্য বইমেলার মতো এবারেরটি নয়।

বিগত বছরের তুলনায় খুব কম লোক, দর্শনার্থী, লেখক, পাঠক এবং প্রকাশক মেলায় অংশ নিয়েছেন। অনেক স্টল বন্ধ ছিল।

বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় বিক্রয় প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমেছে। এছাড়া সপ্তাহব্যাপী লকডাউন বিষয়গুলোকে আরও খারাপ করে তুলেছে। তবে গণপরিবহন পুনরায় চালু হওয়ার পর থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

এ বছরের বইমেলায় খুব কম প্রকাশক অংশ নিয়েছেন এবং আর্থিক ক্ষতি কত বড় হবে তা প্রত্যেকে নির্ধারণ করার চেষ্টা করছেন। মেলায় আগত লেখক নূরজাহান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তারা কম দর্শনার্থী নিয়ে অনলাইন শপগুলোতে নজর দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সময় প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী ফরিদ উদ্দিন বলেন, মেলার পরিদর্শনের সময়টি ছিল অদ্ভুত। গত বছরের মেলার তুলনায় গত ২০ দিনে মাত্র ৪০ শতাংশ বই বিক্রি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধারে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে।

এর আগে মেলা সপ্তাহের ৫ দিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকতো। অনেক প্রকাশক আগের সময়ে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবারে ৪৭টিসহ এবারের বইমেলায় মোট ২ হাজার ৩৩৩টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে।

বইমেলা ২০২১

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাস্থ্য নির্দেশনা বজায় রেখে ১৮ মার্চ অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হয়েছে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা শুরু হলেও করোনা মহামারির কারণে এবার পিছিয়ে মার্চে শুরু হয় বইমেলা। এ বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বইমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে। ২০২১ বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’।

করোনা মহামারিতে সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায় এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় রয়েছে ৩৩টি প্যাভিলিয়ন।

এ বছর ‘শিশু প্রহর’ থাকছে না। শিশু কর্নার সোহরাওয়ার্দীতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এবার ‘লিটল ম্যাগাজিন কর্নার’ স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়া্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। বাংলা একাডেমি এই বছরের মেলায় ১১৮টি সদ্য-মুদ্রিত ও মুদ্রিত বই প্রদর্শন করছে।

দর্শনার্থীদের জন্য সব প্রবেশ পথে হ্যান্ড স্যানিটেশনেশন বুথ স্থাপন করা হয়েছে এবং মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলা শুরু হয়েছিল, তবে বাংলা একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবছর বইমেলার আয়োজন করার জন্য ১৯৭৮ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরে এটি নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থ মেলা’ এবং ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত