গণতন্ত্রের সূচকে ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২১, ০৩:০০

সাহস ডেস্ক

সম্প্রতি সুইডেন থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রের সূচকে ভারতের চেয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি-ডেম ইনস্টিটিউট (ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট) “অটোক্রেটাইজেশন গোস ভাইরাল (স্বৈরাচারীকরণ ভাইরাল হয়ে যায়)” শিরোনামে তাদের গণতন্ত্রের পনেরতম প্রতিবেদনে দাবি করেছে, তারা ১৭৮৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ২০২টি দেশের ৩০ মিলিয়ন ডেটা পয়েন্টসহ গণতন্ত্রের বৃহত্তম ডেটাসেট তৈরি করেছে।

২০১০ সালে বাংলাদেশের লিবারেল ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্স (এলডিআই) স্কোর সর্বকালের সর্বোচ্চ ছিল ০.০৮ (০-১ স্কেলে), ২০২০ সালে তা হ্রাস পেয়ে ০.০৯-এ দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ গত দশ বছরে ৯% পয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

মার্কিন পর্যবেক্ষণ সংস্থা “ফ্রিডম হাউস” বাংলাদেশকে একটি “আংশিক স্বাধীন (পার্টলি ফ্রি)” দেশ হিসাবে গণ্য করার এক সপ্তাহের মধ্যেই এই প্রতিবেদন এলো। সংস্থাটির প্রতিবেদনটি গত এক দশক ধরে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনাবলীর পটভূমিতে সংক্ষিপ্ত আকারে জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত দশকে ৪১টি দেশের মধ্যে ৩২টি দেশে উদার গণতন্ত্র হ্রাস পেয়েছে।

কোভিড -১৯ মহামারি শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভি-ডেম ইনস্টিটিউট ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪৪টি দেশে মহামারির ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব শনাক্ত করতে প্যান্ডেমিক ব্যাকস্লাইডিং প্রকল্প (প্যানডেম) শুরু করেছিল।

এই প্রকল্পে কয়েক ধরনের লঙ্ঘন যেমন- সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য, মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন, অতিরিক্ত পুলিশি শক্তি প্রয়োগ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ পরিমাপ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা কোভিড-১৯ এর সময় জরুরি অবস্থা জারির পর পরই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মাঝারিভাবে আন্তর্জাতিক রীতি লঙ্ঘন করে।

ভারতে গত দশ বছরে, ভারতের এলডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ। লিবারেল ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্সের সূচকটি পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল ও আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত রয়েছে, যেখানে শ্রীলঙ্কার এলডিআই বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০১০ সালে ভারতের এলডিআই ছিল ০.৫৭। ২০২০ সালে সেটা হ্রাস পেয়ে ০.৩৪ এ নেমেছে। যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নাটকীয় পতন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিধি-নিষেধের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। 

ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন সূচকে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হ্রাস পেয়েছে ১৫% হ্রাস পেয়েছে, যেখানে ভারতের ৩১% হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে নেপালের ১০% ও ভুটানের ২% হ্রাস পেয়েছে। কেবলমাত্র শ্রীলঙ্কার গত ১০ বছরে ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিভিল লিবার্টি ইনডেক্সে বাংলাদেশের ১২%, ভারতের ১২%, পাকিস্তানের ১৩% এবং নেপালের ১০% হ্রাস পেয়েছে, বিপরীতে শ্রীলঙ্কার ১২% এবং ভুটান ১% বৃদ্ধি পেয়েছে সিভিল লিবার্টি বৃদ্ধি পেয়েছে। 

নির্বাচনী গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের সূচক ১২%, ভারতের ২৫%, পাকিস্তানের ৯% হ্রাস পেয়েছে। তবে নেপালের (২%) এবং শ্রীলঙ্কার উভয়েরই বৃদ্ধি পেয়েছে।

সংবাদমাধ্যমের ওপর কড়াকড়ি, মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের অপব্যবহারের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে ভারতকে “বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র” থেকে “নির্বাচনী স্বৈরাচার” এর ধাপে নামিয়ে আনা হয়েছে।

রির্পোটে বলা হয়, “নির্বাচনী স্বৈরাচার” বর্তমানে সর্বাধিক জনপ্রিয় শাসন ব্যবস্থা এবং বিশ্বের ৮৭ দেশ এবং ৬৮% মানুষ এই ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে। ছাড়া ২৫টি দেশের মানুষ অটোক্রেটাইজেশ প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বা ২.৬ বিলিয়ন। ব্রাজিল, ভারত, তুরস্ক, এবং আমেরিকার মতো বেশ কয়েকটি জি-২০ ভুক্তদেশ এই অটোক্রেটাইজেশ প্রক্রিয়া বিস্তারের অংশ।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, পুরোপুরি গণতন্ত্র কার্যকর রয়েছে, গত ১০ বছরে এমন দেশের সংখ্যা ১৬-তে নেমে এসেছে। ফলে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪% প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আওতায় রয়েছে।

সুত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত