সিপিবির সিদ্ধান্ত না মানায় ১৬ ছাত্র নেতার পার্টি সদস্য পদ স্থগিত

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২১, ১৯:০৯

পার্টির সিদ্ধান্ত বায়বায়ন না করায় পার্টির গঠনতন্ত্রের ১২(১)-ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ১৬ নেতার পার্টি সদস্য পদ সাময়িক স্থগিত করেছে। এর কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। সিপিবির সাধারণ সম্পারক স্বাক্ষরীত ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির পার্টি সদস্যদের পাঠানো একটি চিঠিতে এই সকল বিষয় জানা যায়।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর মধ্যকার দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য সিপিবি বেশ কয়েকবার ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্র ইউনিয়নকে জরুরী সম্মেলনের সিদ্ধান্ত জানায় তারা। পার্টির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে তারা ছাত্র ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের দায়ে সংগঠনের ৯ নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদের বহিস্কার করে। যার ফলে সিপিবির নেতারা ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসে। কিন্তু সিপিবি যে পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা বলে তা ছাত্র ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক।

পার্টির এমন সিদ্ধান্তের পিছনে কমিউনিস্ট পার্টির বড় বড় প্রভাবশালী নেতা যারা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়ের গ্রুপকে সমর্থন করছে তাদের দিক নির্দেশনা আছে বলে জানা যায়। সিপিবির সর্বশেষ সিদ্ধান্তও তাদের আধিপত্যর কারণেই এসেছে বলে আরো জানা যায়।

ছাত্র ইউনিয়নের সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বুধবার বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের চতুর্থ কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৯ নেতাকে বহিষ্কার করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। একইসঙ্গে সংগঠনের ঢাকা মহানগর সংসদ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদও বিলুপ্ত করা হয়।

পার্টির এই সকল বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, "ছাত্র ইউনিয়ন একটি স্বাধীন ছাত্র গণসংগঠন। ১৯৫২ সাল থেকেই ছাত্র ইউনিয়ন আজ পর্যন্ত তার যেই স্বাধীন গণসংগঠনের চরিত্র তা বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হয়েও আমি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত থাকতে পারি, তবে তা প্রকাশের জন্য আমি বাধ্য না। ছাত্র ইউনিয়ন তার গঠনতান্ত্রিক ভাবে যেভাবে পরিচালিত হওয়ার কথা এর বাইরে গিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন পরিচালনার অধিকার আমরা রাখি না। একজন কর্মী হিসেবে ছাত্র ইউনিয়নের গণসংগঠনের চরিত্র বজায় রাখা আমার দায়িত্ব, এবং সেই দায়িত্ব পালনে আমি সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাবো।"

সিপিবিতে সদস্যপদ স্থগিতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমার প্রথম পরিচয় আমি ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী। কমিউনিস্ট পার্টির বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।”

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, "এটি পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই বিষয়ে আমরা সংবাদ মাধ্যমকে কোনো কিছু বলে চাই না।”

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন গঠনতান্ত্রিক ভাবে একটি স্বাধীন ছাত্র গণসংগঠন। স্বাধীন ছাত্র গণসংগঠন হওয়ার এর অনেক নেতা-কর্মী আদর্শিক দিক থেকে মূল ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর সাথে জড়িত। অনেকক্ষেত্রে তারা গণসংগঠনের মধ্যে পার্টির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে থাকে। কিন্তু সিপিবি বর্তমানে ছাত্র ইউনিয়নের উপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যেই প্রয়াস করছে তা অবশ্যই ছাত্র ইউনিয়নকে আর স্বাধীন ছাত্র গণসংগঠনের রূপে রাখে না। ছাত্র ইউনিয়নে নিজের আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে সিপিবি তার অলিখিত অঙ্গসংগঠনের রূপ দেয়ার চেষ্টা করছে। এমন অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়ন তার স্বাধীন ছাত্র গণসংগঠনের চরিত্র হারাতে বসেছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত