বাংলাদেশের শীর্ষ চায়ের ব্র্যান্ড

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:০৫

সাহস ডেস্ক

সকালে বা কাজের চাপের মধ্যে এক কাপ চা আপনার মনমেজাজ ভালো করে দিতে পারে। ৫ হাজার বছরেরও আগে চীনে প্রথম চায়ের ব্যবহার শুরু হয়। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের চা এবং বিভিন্ন প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে চা তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে চা সুস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক পানীয় হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই সমাদৃত হয়ে আসছে। আসুন এই অঞ্চলের চা উৎপাদন শিল্পের ইতিহাস এবং বিকাশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। আমরা বাংলাদেশের সেরা চায়ের ব্র্যান্ডগুলোতেও মনোনিবেশ করব এবং আপনার সঠিক স্বাদ অনুসারে এমন একটি ব্র্যান্ড পছন্দ করুন।

বাংলাদেশে চা উৎপাদনের ইতিহাস

বাংলাদেশ বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ চা উৎপাদনকারী দেশ। চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১০ম।

ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশে চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ১৮৩৯ সালে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসাম ও সিলেটের পার্বত্য অঞ্চলে চা বাণিজ্য শুরু করে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে ১৮৪০ সালে চা চাষ শুরু হয়। বেশ কয়েক বছর গবেষণা করার পর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় চা এস্টেট থেকে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৭টি বাণিজ্যিক চা এস্টেট রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কর্মক্ষম চা বাগান। এখানকার এই শিল্প বিশ্বের ৩ শতাংশ চা উৎপাদন করে থাকে এবং ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশে চা উৎপাদনের সাথে প্রায় ৭৫ শতাংশই নারী শ্রমিক জড়িত।

বাংলাদেশের চা শিল্প: একটি পর্যালোচনা

পাটের পরে চা হচ্ছে বাংলাদেশের সবথেকে বেশি রপ্তানি হওয়া অর্থকারী ফসল। এই শিল্প থেকে জাতীয় জিডিপির ১ শতাংশ আসে। বাংলাদেশি মধ্যম শ্রেণির উত্থান এই শিল্পকে লাভজনক দেশীয় বাজারের দিকে আলোকপাত করে ব্যাপকভাবে চালিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে এই শিল্পের মুষ্টিমেয় বাংলাদেশি কোম্পানির আধিপত্য রয়েছে। যেমন:  এম. এম ইস্পাহানি লিমিটেড, জেমস ফিনলে বাংলাদেশ, কাজী অ্যান্ড কাজী, ট্রান্সকম গ্রুপ, ডাঙ্কান ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেড, ওরিয়ন গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ ইত্যাদি।

২০১২ সালে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন করে, যা প্রায় ৬ হাজার ৩৮৫ কোটি কিলোগ্রাম ছিল। ১৯৪৭ সালে যেখানে ২৮ হাজার ৭৩৪ হেক্টর ভূমি ছিল, সেখানে বর্তমানে ৫৬ হাজার ৮৪৬ হেক্টরেরও বেশি ভূমি এই শিল্পের চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে সরকার ক্ষুদ্র পরিসরে চা উৎপাদকদের এই শিল্পের বিকাশে কাজ করতে উদ্যোগ নিয়েছে, বিশেষকরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে।

বর্তমানে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা বাগান আছে মৌলভীবাজার জেলায়। দেশের অন্যান্য প্রধান চা উৎপাদনকারী জেলাগুলো হলো হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

বাংলাদেশের শীর্ষ চায়ের ব্র্যান্ড

ইস্পাহানি মির্জাপুর চা

ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মালিকানাধীন ইস্পাহানি মির্জাপুর চা টানা ষষ্ঠবারের মতো ‘সেরা হট বেভারেজ (চা) ব্র্যান্ড ২০২০’ পুরস্কার লাভ করেছে। এছাড়াও দেশীয় ও বহুজাতিক সকল ব্র্যান্ডের মধ্যে তৃতীয় সেরা ব্র্যান্ড ২০২০ অর্জন করেছে।

বাংলাদেশের চা শিল্পে ইস্পাহানি গ্রুপের অবস্থান শীর্ষে। ইস্পাহানি পরিবার দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প ও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। চা ব্যবসার জন্য বেশি পরিচিত হলেও ইস্পাহানি গ্রুপ আরও নানান ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন করেছে। মির্জাপুর বেস্ট লিফ, মির্জাপুর ডাবল চেম্বার টি ব্যাগ, ব্লেন্ডার’স চয়েস এবং জেরিন ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে মার্কেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ঘরে ঘরে পরিচিত নাম।

১৮২০ সালে হাজী মোহাম্মদ হাশেম পারস্যের ইস্পাহান থেকে বোম্বাইয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন এমন একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, যা পরবর্তীকালে হয়ে উঠে উপমহাদেশের সবচেয়ে অভিজাত প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম।

বৃহত্তর সিলেটে রয়েছে ইস্পাহানি টি লিমিটেডের তিনটি বৃহৎ চা বাগান, মির্জাপুর, গাজীপুর ও জেরিন বাগান এবং চট্টগ্রামে রয়েছে নেপচুন চা বাগান। এই বাগানগুলোতে প্রতিবছর আনুমানিক ৪ মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা উৎপাদিত হয়, যা বাংলাদেশের মোট চা উৎপাদনের ৫ শতাংশেরও বেশি। এখানে হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ২ হাজার ২৫০ কিলোগ্রাম যা দেশের সর্বোচ্চ উৎপাদন হারগুলোর অন্যতম।

প্রতিটি বাগানেই আছে আধুনিক চা উৎপাদনের যন্ত্রপাতি সজ্জিত ফ্যাক্টরি। ইস্পাহানির বাগানগুলোতে উচ্চমানের চা উৎপাদিত হয় এবং প্রতিবছর চট্টগ্রামে প্রিমিয়াম মানের চা হিসেবে নিলামে বিক্রি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে মির্জাপুর, গাজীপুর, জেরিন ও নেপচুন সর্ববৃহৎ নিলামের শীর্ষস্থান অর্জনের জন্যে শীর্ষ দশটি চা বাগানের তালিকায় রয়েছে।

কেকে (কাজী অ্যান্ড কাজী চা) এবং তেঁতুলিয়া চা

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশের একমাত্র অর্গানিক চা উৎপাদন করে কাজী অ্যান্ড কাজী স্টেট। চা বাগানটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় অবস্থিত। এই স্বর্গীয় স্থানটি দার্জিলিং থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই কোম্পানি স্থানীয় এবং বিদেশি উভয় বাজারের জন্য অর্গানিক চা উৎপাদন করে।

২০০০ সালের আগস্টে কাজী অ্যান্ড কাজী চা এস্টেট লিমিটেড জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে চা গাছের রোপনের যাত্রা শুরু করে যা এর আগে কখনো চাষাবাদে ব্যবহার করা হয়নি। বাংলাদেশ চা বোর্ডের সহায়তার পাশাপাশি ব্যাপক গবেষণা অনুসরণ করে এই চা কোম্পানি একটি বৃহৎ চা বাগান গড়ে তোলে যা সর্বোত্তম মানের চা উৎপাদন করে। ২০০৬ সালে এই কোম্পানিটি ‘কে কে টি’ ব্র্যান্ড নামে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে প্রবেশ করে।

ফ্রেশ প্রিমিয়াম চা

ফ্রেশ প্রিমিয়াম চা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা চা ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডটির মালিকানা মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বাগানের সেরা পাতা থেকে বাছাইকৃত চা পাতা দিয়ে ফ্রেশ প্রিমিয়াম চা প্রস্তুত করা হয়। ঘরে এবং বাইরে ব্যবহারের জন্য এমজিআই সকল ধরনের চা প্রেমিকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্যাকে চা পাতা নিয়ে বাজারে এসেছে।

আপনি যদি গ্রিন টি’র প্রতি অনুরাগী হন তবে তাজা প্রিমিয়াম গ্রিন টি ব্যবহার করে দেখুন। এই বিশেষ চা টি সবুজ কোমল পাতা থেকে মিশ্রিত হয় যা সাবধানতার সাথে হাত দিয়ে নেয়া হয়। উজ্জ্বল লিকার, আকর্ষণীয় রঙ এবং প্রাকৃতিক গন্ধ চায়ে বাগানের তাজা স্বাদ নিয়ে আসে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত