সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মা-মেয়েকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:৫৮

সাহস ডেস্ক

গাজীপুরে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদারের লোকজন মা-মেয়েকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করেছে। নির্যাতনে আহতরা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলার সিরাজপুর এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩০) ও তার মেয়ে মাহবুবা আক্তার ঝুমা (১৬)।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সিরাজপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫ বছর আগে ভুক্তভোগী নারীর স্বামী মারা যান। এর পর থেকে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বন বিভাগের জমিতে বাস করে আসছেন তিনি। পোশাক কারখানায় চাকরি করে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে আসছেন। অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোরকমে মা-মেয়ের সংসার চলছে।

কিন্তু তাদের সংসারে হানা দেয় একটি প্রতারক চক্র। ওই চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন মমতাজ বেগম। পরে তাকে বাধ্য হয়ে স্থানীয় আব্দুল গফুর ও মনির হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে। টাকা নেয়ার দুই মাস পর থেকে সুদের টাকা আদায় করতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন গফুর-মনিররা।

টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম এক মাসের সময় দেন তাদের। কিন্তু বেধে দেয়া সময় শেষ না হতেই আব্দুল গফুর, তার স্ত্রী কুলসুম বেগম, ছেলে রিপন হোসেন এবং মনির হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম, মেয়ে মুক্তা আক্তার, ছেলে শহিদ হোসেন, স্থানীয় নয়ন হোসেন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিধবা মমতাজ বেগমের বাড়ি ঘেরাও করেন। পাওনাদারেরা তাকে ও তার কিশোরী মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে। ঘটনার পর অভিযুক্তরা পালিয়ে গেছে।

এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে কালিয়াকৈর থানায় ৮ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ দৃশ্যটি ভিডিও ধারণ করতে গেলে মমতাজের ছোট বোন মেহেরিন সুলতানাকেও তারা গাছের সঙ্গে বাঁধার চেষ্টা করেন। তাদের মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে প্রায় ঘণ্টাখানেক নির্যাতন চালালেও কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে কৌশলে মেহেরিন পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। তবে পুলিশ আসার খবরে অভিযুক্তরা পালিয়ে যান।

ভুক্তভোগী মমতাজ বেগম বলেন, একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা হারিয়েছি। ওই টাকা যোগাড় করতে আব্দুল গফুর ও মনির হোসেনের পরিবারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে। ওই টাকা ফেরত দেয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম এক মাসের সময় দিয়েছেন। আমি ওই টাকা ফেরত দেবো। কিন্তু ওই সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে ও আমার মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে।

ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে নির্যাতিত মা-মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাতে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী সবুজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত