“খাদ্য উৎপাদনে অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ তৈরী করা দরকার”

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:১৬

সাহস ডেস্ক

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণা এবং অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মাটির উর্বরতা এবং পরিবেশ বিবেচনা করে যে ফসল যেখানে ভাল উৎপন্ন হয় সেখানেই তার চাষাবাদ করতে হবে। অল্প খরচে অধিক মাত্রায় ফসল উৎপাদন কিভাবে করতে পারি সেটা বিবেচনায় এনে মাটির উর্বরতা এবং পরিবেশ বিবেচনা করে সমগ্র বাংলাদেশের এলাকা ভিত্তিক একটি ‘জোন ম্যাপ’ তৈরী করা দরকার।’

বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি অর্জনে প্রকাশিত ‘১শ’ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি এ সময় সরকারি চাকুরে বিজ্ঞানীদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে বিশেষ প্রণোদণার আওতায় আনা যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা কৃষিমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের দেশের কৃষিপণ্য যাতে মান সম্পন্ন করা যায় তার জন্য আরো পরীক্ষাগার তৈরী করা দরকার। সেইসাথে অঞ্চলভিত্তিক পরীক্ষাগারও নির্মাণ প্রয়োজন।’

দেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর বলেই তার সরকার কৃষিকেই সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্য উৎপাদনের মূলে থাকতে হবে দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো এবং দেশ-বিদেশে বাজার সৃষ্টি ও রপ্তানি।’

তিনি বলেন, ‘কৃষি ভিত্তিক শিল্প আমরা গড়ে তুলতে চাই এবং সেটাই আমরা করবো। এ বিষয়েও আমাদের গবেষকদের আমি সহযোগিতা চাই।’

গবেষকদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদিনে গবেষণা শেষ হয়ে যায় না। দীর্ঘদিন গবেষণা করতে হয়। তবে, চাকরীর একটা বয়স নির্দিষ্ট করা রয়েছে, যার পরে আর চাকরি করা যায় না। কিন্তু গবেষণায় সম্পৃক্ত সরকারি চাকুরেদের জন্য আমি একটা কথাই বার বার বলেছি, এই গবেষকদের কিভাবে আমরা প্রণোদণা দিতে পারি যাতে গবেষণার ফসল তারা হাতে পাওয়া পর্যন্ত থাকতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘এরজন্য তার সরকার একবার উদ্যোগ নিলেও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই এই সুযোগটা নিতে চাওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অফিসের পিয়ন, আর্দালি, দারোয়ান থেকে শুরু করে কেউ আর বাদ যান না। এটাতো হয় না। এটাই আমাদের দেশে সমস্যা। কাজেই গবেষণায় যারা সম্পৃক্ত তাদের জন্য এটা কিভাবে করা যেতে পারে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বয়স সীমা বৃদ্ধি করায় সেখানে আর সমস্যা হচ্ছে না। কাজেই, আমরা ইনস্টিটিউটগুলোতে কিভাবে এই প্রণোদণাটা দিতে পারি। সেই পরামর্শটা আপনাদের কাছ থেকে চাচ্ছি। কারণ, আমাদের কৃষি গবেষকদের আমরা আরো সুযোগ দিতে চাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের সমস্যাবলী নিয়ে আলোচনার জন্য তাদের সঙ্গে একটি সরকারি মতবিনিময়ের ইচ্ছা আমার রয়েছে। ভবিষ্যতে সেই ধরনের একটা সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে আমি জানতে পারি আপনারা আরো কিভাবে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেন।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, কৃষি মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাউল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন। আরো বক্তৃতা করেন বিএআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। সফল কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম ও নিজন্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ধান, পাট, ইক্ষু চা, রেশম, তুলা, বনজ সম্পদ এবং মৎস সম্পদের থেকে নির্বাচিত ১শ’টি প্রযুক্তি এটলাসে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, রয়েছে প্রযুক্তিগুলোর প্রয়োগে বেশ কিছু সাফল্যের গল্প। যা হতে পারে কৃষি উন্নয়নে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। দেশ-বিদেশের পাঠকের সুবিধার্থে এই এটলাসে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজীও রাখা হয়েছে।

বিএআরসি (বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল) প্রকাশিত এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের উদ্ভাবিত এই ‘১শ’ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস’ আধুনিক কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকদের জীবন মান উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত