পুলিশকে কথায় নয়, কাজে পটু হতে হবে: হাইকোর্ট

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৩২

সাহস ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্বরত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের ঘটনায় তলব আদেশে হাজির হওয়া পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘কে কোন দল, কোন আদর্শের সেটা বিবেচনা করার দায়িত্ব পুলিশের নয়। মানুষের এমন যেন মনে না হয় যে দেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।

আদালত বলেন, পত্রিকায় খবর অনুযায়ী যা দেখলাম তাতে এটা যদি বাস্তব চিত্র হয়, তাহলে ভয়ঙ্কর অবস্থা। পুলিশকে কথায় নয়, কাজে পটু হতে হবে। পুলিশ যাতে মানুষের বন্ধু হয়, সেটা করতে হবে। সমাজকে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। আইনের শাসন, বিচার ব্যবস্থা একা পূর্ণাঙ্গতা পায় না। রাষ্ট্রের সব অঙ্গ এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। এজন্য কথায় পটু না হয়ে, কাজ করতে হবে।

গত বুধবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত এক আদেশে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে কুষ্টিয়ার এসপিকে ২৫ জানুয়ারি সকালে হাজির হতে নির্দেশ দেন। সেই সাথে নির্বাচনের দিনের ওই ঘটনায় কুষ্টিয়ার এই এসপি বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। তিন দিনের মধ্যে এসপি এস এম তানভীর আরাফাতকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এর আগে এক আবেদনের মাধ্যমে এস এম তানভীর আরাফাত ক্ষমা প্রার্থনা করে আদালতকে জানান, তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে চিনতে পারেননি। তাই এমন অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক হবেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল আর কখনও হবে না।

এরপর আদালত ক্ষমার আবেদনের ওপর আদেশের জন্য আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণের আদেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত এসপিকে বলেছেন, বিচার বিভাগের প্রতি আপনাদের মনোভাব আগামী দিনের কর্মকাণ্ডে কতটা প্রতিফলিত হয় সেটা দেখতে চাই। পরে আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ জানুয়ারি কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচন চলাকালীন ঘটনায় এসপি তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা একটি আবেদনের কপি এর আগে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর পাঠানো হয়। এই আবেদনের অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজির দপ্তরেও পাঠানো হয়।

সেই আবেদনে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান বলেন, কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনের সময় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে কয়েকজনকে ভোটকেন্দ্রের বুথের ভেতর পোলিং এজেন্টদের সাথে বসে থাকতে দেখি। তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত এ ফোর সাইজের কাগজ দেখান। প্রিজাইডিং অফিসাসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার সময় ওই কেন্দ্রে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত ৪০/৫০ জন ফোর্সসহ আসেন। তিনি প্রবেশ করেই প্রিজাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন। সেসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সাথে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। একপর্যায়ে পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কে? কী করেন এখানে? আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনি এখানে কী করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান। পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক, চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তখন দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর এসপিসহ তার ফোর্সরা আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্য করে একাধিকবার বলেন, এসব লোককে পাঠায় কে? বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কী আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে। তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত