উচ্ছেদ তালিকায় বৃহত্তর যশোরের ৪০০ ইটভাটা

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:০৬

শ্রাবণ রায় টবি

বৃহত্তর যশোর জেলার ৪০০ অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ধারাবাহিকভাবে এই উচ্ছেদ অভিযান চলবে। শুক্রবার পর্যন্ত এই চার জেলায় অবৈধ ভাটা উচ্ছেদের সংখ্যা এখনো ৫০ পার হয়নি। প্রতিমাসে দুই দিন করে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। একারনে ডিসেম্বরে আর উচ্ছেদ অভিযান নেই।

গত ২০ ডিসেম্বর রবিবার অভিযানের শুরুর দিন যশোরের নয়টি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চার উপজেলায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। পরদিন সোমবার আরো ১৩টি ভাটা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক মো. সৈয়দ আনোয়ার জানান, যশোর জেলায় দুই শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮০টিই ইট ভাটা অবৈধ। এসব ভাটার লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। অবৈধ এ ভাটাগুলো বায়ুদূষণ করে চলেছে। সারাদেশের অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদের অংশ হিসেবে যশোরে ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোজিনা আক্তারের নেতৃত্বে রোববার সকাল থেকে কেশবপুর, মণিরামপুর, ঝিকরগাছা এবং যশোর সদর উপজেলার নয়টি ইটাভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সোমবার জেলার ১৩টি ইটভাটা উচ্ছেদ করা হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটভাটাগুলো হলো কেশবপুরের সাতবাড়িয়া এলাকার মেসার্স সুপার ব্রিকস, বেগমপুর বাজার এলাকার মেসার্স রিপন ব্রিকস, মণিরামপুর উপজেলার মেসার্স সরদার ব্রিকস, ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানি এলাকার মেসার্স এলবি ব্রিকস, মেসার্স জনতা ব্রিকস, যশোর সদর উপজেলার মালঞ্চী এলাকার মেসার্স এমবিবিআই ব্রিকস। তিনি আরো বলেন, বাকি অবৈধ ভাটাগুলো পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।

সৈয়দ আনোয়ার আরো জানান, যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতাধীন নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলাতেও প্রায় ৩০০ অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এ সপ্তাহজুড়ে ওইসব ভাটাতেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। প্রতি জেলায় দুই দিন করে অভিযান চলবে। এভাবে প্রতিমাসে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করা হবে।

এদিকে, নোটিশ ছাড়া ইটভাটা ভেঙে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভাটার মালিক ও শ্রমিকরা।

এলবি ব্রিকসের মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশের কথা বলে কোনো নোটিশ ছাড়াই ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছিলাম আপনারা সিলগালা করে দেন। আমি ভাটা চালাবো না। কিন্তু তারা ভাটা ভেঙে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি করে গেল। আমার এখানে ৫০০ শ্রমিক কাজ করে। সবাই আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। এদের কীভাবে চলবে!

জনতা ব্রিকসের ম্যানেজার বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে এ ভাটা চলছে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত সকল কাগজপত্র ছিল। ওই সাল থেকে আর লাইসেন্স নবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ। বারবার লাইসেন্সের জন্য গেলে বলে এখন বন্ধ আছে। অথচ, সরকারি কর্মকর্তারা এসে ভ্যাট নিয়ে যায়। দুই মাস আগেও পাঁচ লাখ টাকা ভ্যাট দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট নিয়ে কোন ভাটা ভাঙা হলো তার কোনো জবাব দিলো না। ভাটার নামে ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে। মানুষের কাছে ৫০ লাখ টাকা পড়ে আছে। এ অবস্থায় ইটভাটা ভেঙে দেওয়ায় সব শেষ হয়ে গেল।

এ ভাটার কয়েক শ্রমিক বলেন, তারা অন্য জেলা থেকে কাজ করতে এসেছেন। ভাটা ভেঙে দিয়ে যাওয়ায় এখন তাদের পথে বসা ছাড়া উপায় নেই। মজুরি মিলবে না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত