স্কাউটের জাতীয় সর্বোচ্চ সম্মান পাচ্ছেন কবির বিন আনোয়ার

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:০৮

সাহস ডেস্ক

গত ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ স্কাউটের নির্বাহী পরিচালক আরশাদুল মোকাদ্দিস স্বাক্ষরিত এক বার্তায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার'কে বাংলাদেশ স্কাউটের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড 'রৌপ্য ব্যাঘ্র' পদকে ভূষিত করার জন্য মনোনীত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। উক্ত বার্তায় কবির বিন আনোয়ার'কে জানানো হয়,
"অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, স্কাউট আন্দোলনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে আপনার অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় প্রধান কমিশনার আপনাকে বাংলাদেশ স্কাউটের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড 'রৌপ্য ব্যাঘ্র' পদকে ভূষিত করার জন্য মনোনীত করেছেন। 
এ অ্যাওয়ার্ড অর্জনের জন্য মনোনীত হওয়ায় আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।"

কবির বিন আনোয়ার একজন ক্যারিয়ার সিভিল সার্ভেন্ট। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৭ম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনি ০১ জানুয়ারী ১৯৬৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আনোয়ার হোসেন রতু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী হওয়া সত্বেও পেশাগত জীবনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন আর্থ সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কবির এর মা সৈয়দা ইসাবেলা ছিলেন ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের একজন অন্যতম সংগঠক। তিনি পেশাগত জীবনে শিক্ষকতা করতেন। সেইসাথে, তিনি রচনা করেছেন ২২ টি বই।কবির এর মাতামহ সৈয়দা ইসহাক হোসাইন সিরাজী ছিলেন একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি বিখ্যাত বাঙালী লেখক ও কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী এর ভাই। তাঁর পিতামহ আব্দুস সামাদ মিয়া ছিলেন একজন আইনজীবী, তিনি তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। কবির বিন আনোয়ার এর সহধর্মীনি তৌফিকা আহমেদ। তারা ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র ও দুই কন্যার অভিভাবক। কবির বিন আনোয়ার তাঁর স্কুল ও কলেজ জীবন সম্পন্ন করেন রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা থেকে। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি আইন শিক্ষার অভিপ্রায়ে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন।

কবির বিন আনোয়ার ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি তার বর্ণিল ও সাফল্যমন্ডিত দীর্ঘ পেশাগত জীবনে একাধারে মাঠ প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদে থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন। মাঠপ্রশাসনের যে সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি কর্মরত ছিলেন তার মধ্যে সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অন্যতম। তাছাড়া তিনি সহকারী সচিব হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, First Secretary হিসেবে বাংলাদেশ এ্যাম্বাসি, হেগ, ন্যাদারল্যান্ডে, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে, উপসচিব হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং  সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি সরকারের  সিনিয়র সচিব হিসেবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অধিষ্ঠিত আছেন। কবির বিন আনোয়ার নানাবিধ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ এর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা, সেমিনার, কর্মশালা ও নোগোসিয়েশন এ অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলন, ওআইসি সম্মেলন, কমনওয়েলথ্‌ সম্মেলন এ অংশগ্রহণ করেন এবং পবিত্র হজ্জ্ব পালনে সৌদিআরব গমন করেন। এছাড়াও তিনি ১৭টি দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী সফরে সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন। তিনি সর্বমোট ৪২টি দেশ ভ্রমণ করেন। তার মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জাপান, সুইজারল্যান্ড, ভারত, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, অষ্ট্রেলিয়া, ইতালি, বেলজিয়াম, সিরিয়া, ভিয়েতনাম, নেদারল্যান্ড, নেপাল, মালয়েশিয়া, সৌদি-আরব, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, লুক্সেমবার্গ, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, কুয়েত, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, ডেনমার্ক, রাশিয়া, মরক্কো মালদ্বীপ এবং তুরষ্ক।  

পেশাগত কর্মক্ষেত্রের বাইরেও তিনি জড়িত আছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে। তার মধ্যে অন্যতম- চেয়ারম্যান, জাতীয় সম্পত্তি বিষয়ক কমিটি বাংলাদেশ স্কাউট, মহাসচিব, বাংলাদেশ এ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশেন, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইয়োগা এসোসিয়েশন, সাধারণ সম্পাদক, ফজলুল হক মুসলিম হল এলামনাই এসোসিয়েশন, ঢাবি, চেয়ারম্যান, ইসাবেলা ফাউন্ডেশন, পরিচালক, বাংলাদেশ লাইয়ন ফাউন্ডেশন, মেম্বার, এসডাব্লিউআইডি, বাংলাদেশ, মেম্বার, অদম্য বাংলাদেশ,  প্রধান উপদেষ্টা, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ জেলা শাখা, উপদেষ্টা, মজার স্কুল (পথশিশুদের জন্য পরিচালিত বিদ্যালয়), তাছাড়া তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি/ সুন্দরবন সংরক্ষণ কমিটি/ নদী গবেষণা প্রোগ্রাম এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

কবির বিন আনোয়ার বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রাম এর চেতনা, অনুভূতি ও সত্ত্বার সাথে গভীরভাবে জড়িত। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে অন্যতম বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-১), বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-২), বিস্মৃত মুসলিম মানস, রুপসী বাংলা (১ম খন্ড), প্রযুক্তি বদলে দিল যারা, অপরুপ বাংলাদেশ (১ম খন্ড)। এছাড়াও তিনি UK Foreign & Commonwealth Office, De-Classified Documents 1962-1971, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and Struggle for Independence এবং US State Department, De-Classified Documents 1953-1973, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and Struggle for Dependence সম্পাদনা করেন।

দেশে ও বিদেশে তাঁর জনমুখী কল্যাণধর্মী কাজের জন্য অসংখ্য পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। তিনি ITU থেকে ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮ সালে WISIS পুরষ্কার গ্রহণ করেন। ২০১৬ ও ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন পদক এবং ২০১৭ সালে open Group Award গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদকেও ভূষিত হন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত