ছাত্রলীগ নেতা বিজয় হত্যা মামলার বাদীকে অপহরণ, বগুড়ায় উদ্ধার

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২০, ১৯:০৮

সিরাজগঞ্জে দলীয় কোন্দলে এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলার বাদী ফারুককে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে নেওয়ার পখে বগুড়ার শাহজাহানপুর থানা পুলিশ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া রুবেল সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চালা শাহবাজপুর এলাকার আব্দুল কাদের প্রমাণিকের ছেলে এবং নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়ের বড় ভাই।

শাহজাহানপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দিন জানান, বগুড়ার শাহজাহানপুর রহিমাবাদ উত্তরপাড়া জামে মসজিদের মুসুল্লীরা তাকে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়ার পর সেখান থেকে ০২ আগস্ট (রবিবার) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখা হয়। পরে রুবেলের স্বজনদের সংবাদ দিয়ে পরিবারের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে রুবেলের কাছে অপহরণের চেষ্টার কথা অনুযায়ী একটি সাধারণ ডায়েরির কথা নিশ্চিত করে বগুড়ার শাহজাহানপুর থানার এসআই ওবায়দুল্লা আল মামুন জানান, ‘উদ্ধারের পর রুবেল পুলিশকে জানিয়েছে বিজয় হত্যা মামলা তুলে নিতে এবং বিজয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ও ম্যামোরী কার্ড নেওয়ার জন্য তাকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নেওয়া হয়েছিল। চিৎকারের কারণে বেকায়দায় পড়ে অপহরণকারীরা তাকে বগুড়ার মাঝিরা ক্যান্টরমেন্ট সংলগ্ন এলাকায় মাইক্রোবাস থেকে তাকে ফেলে দেয়।

এ বিষয়ে বগুড়ার শাহজাহানপুর রহিমাবাদ উত্তরপাড়া জামে মসজিদের মুসুল্লী ও স্থানীয় গোলাম রব্বানী জানান, যোহর নামাজ শেষে আনুমানিক পৌনে ২টার দিকে মসজিদের সামনে ওই যুবককে একটি মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়। ছেলেটি খুবই ভয়ার্ত এবং জ্ঞানহীন পর্যায়ে ছিলো। পরে ঐ যুবকের মাথায় পানি ঢালার পরে কিছুটা সুস্থ্ হলে সে জানায়, আমাকে অপহরণ করা হয়েছিলো এবং মারপিট করে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা তাকে প্রাথমিকভাবে সেবা যত্ন করে মসজিদের মধ্যে রেখে দেই। সংবাদ পেয়ে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে গেছে।

অপহৃত রুবেলের বাবা আব্দুল কাদের বলেন, ০২ আগস্ট (রবিবার) সকাল আনুমানিক ১০ টার পরে রুবেল বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। দুপুরে তিনি সংবাদ পান তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছিল। বগুড়ার শাহজাহানপুর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আমাদের কাছে ফেরত দেন। ছেলেকে মারধর করার কারণে বর্তমানে সিরাজগঞ্জ সদরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

০৩ আগস্ট (সোমবার) ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলার বাদী ফারুক জানায়, আমার ভাই হত্যার পর থেকেই, পাভেল, মামুন, লিমন, রাশেদ, আলামিন বাবু, জুবায়েরসহ কয়েকজন বিজয়ের ব্যাবহৃত মোবাইল ও ম্যামরি কার্ড দাবী করে আসছে এবং বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে। ঘটনার সময় আরো কিছু হেলমেটধারী জামতৈল বাজারে সকাল ১০টার দিকে দুটি সাদা মাইক্রোবাস দুদিক থেকে গতিরোধ করে এবং একটি কালো মাইক্রোবাস পাশে এসে রাস্তা বন্ধ করে। পরে জোর পূর্বক কালো গাড়িতে তুলে গামছা দিয়ে মুখ বেধে ফেলে এবং মামলা করার কারণে ও বিজয়ের মোবাইল ও ম্যামোরী কার্ড দাবী করে। এ সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে জ্ঞান ফিরলে পুলিশ দেখতে পেয়ে আমি চিৎকার ও গাড়ির জানালায় দু’হাত তুলে ইশারা করাতে ওরা আমাকে গাড়ি থেকে লাথি দিয়ে ফেলে পালিয়ে যায়। তখন মসজিদের কিছু মুসুল্লী আমাকে উদ্ধার করে। এরপর বগুড়ার শাহজাহানপুর থানায় আমাকে নিয়ে গেলে, আমি বিস্তারিত সব খুলে বলি এবং একটি সাধারণ ডায়েরিও করি। পরে পুলিশের সহযোগিতায় পরিবারের কাছে ফিরে এলে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কামারখন্দ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম রাতে বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমরাও প্রাথমিকভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। তবে কেউ এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ করেনি।”

প্রসঙ্গত, ২৬ জুন জাতীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ০৯ দিন লাইভ সাপোর্টে থাকার পর ০৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ২৭ জুন জেলা ছাত্রলীগের ০২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ০৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পরই ০৪ আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে ০৩ জন জেলহাজতে, আল আমিন নামে একজন জামিনে এবং প্রধান আসামী শিহাব আহমেদ জিহাদ পলাতক রয়েছে। ২৮ জুন মামলার আসামী জেলা ছাত্রলীগের ০২ সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত