ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের পরীক্ষা করাতে না পারা ছেলেকে মারধর, দুই আনসার প্রত্যাহার

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২০, ১২:৫৪

সাহস ডেস্ক

রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে ব্যর্থ হওয়া এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় দুই আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শুক্রবার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকের এই ঘটনার ছবি তুলতে যাওয়া দুই আলোকচিত্রী সাংবাদিকের উপরও চড়াও হয়েছিলেন ওই আনসার সদস্যরা। তাদের আক্রমণে এক ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরার প্রটেক্টর ভেঙে গেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর আনসার পূর্ব জোন পরিচালক (জোন কমান্ডার) মো. কামাল হোসেন বলেন, ওই ঘটনার পর গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে মুগদা হাসপাতালের দু’জন আসনার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনার ভুক্তভোগী শাওন হোসেন মুগদা মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, তার মা ক্যান্সারের রোগী। কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না তার প্রতিবেদন লাগে। গত ২০ জুন তিনি মায়ের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে যান। তবে প্রতিবেদন না পাওয়ায় দুইবার নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে অভিযোগ জানান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা আবার পরীক্ষার জন্য বলেন। সেজন্য শুক্রবার আবার পরীক্ষার জন্য মাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন।

মাকে নিয়ে ভোর ৫টায় এসে লাইনে দাঁড়ানোর পরেও তাদের সিরিয়াল হয় ৩৬ নম্বরে। সেখানে দুটো লাইন হয় একটি বিনামূল্যে বুথে নমুনা দেওয়া, অপরটি ২০০ টাকা দিয়ে হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর। হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর জন্যই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাওনের মা।   

শাওন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ৪০ জনের পরীক্ষা করার কথা, কিন্তু আমার মায়ের সিরিয়াল ছিল ৩৬ নম্বর। ৩৩ নম্বর সিরিয়াল চলে যাওয়ার পর হঠাৎ করে আনসার সদস্যরা এসে বলে, আজ আর হবে না। এরপরে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা (আনসার) বলে, ৪০ জন হয়ে গেছে। তাই আর হবে না। তখন আমি প্রতিবাদ করলে আনসার সদস্যরা আমাকে কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে পাশে আনসার ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়। আমাকে দুটি চড়ও মারে এবং গালাগাল করে।

এদিকে শাওনকে ধরে ক্যাম্পে নেওয়ার সময় দৈনিক দেশ রূপান্তরের ফটো সাংবাদিক রুবেল রশীদ এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের আলোকচিত্রী জয়ীতা রায় এগিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা তাদের উপরও চড়াও হয়।

জয়ীতা বলেন, একটি ছেলের সাখে আনসার সদস্যদের তর্কাতর্কি হচ্ছে দেখে এগিয়ে যাই এবং ছবি তোলার চেষ্টা করি। এ সময় আনসার সদস্যরা আমার উপর এবং আমার সাথে থাকা রুবেলের উপর চড়াও হয়। কিছুটা সরে না আসলে আমার শারীরিক ও ক্যামেরার ক্ষতি হত। তবে সাথে থাকা সহকর্মী রুবেলেরে ক্যামেরায় লেগে লেন্সের ফিল্টার ভেঙ্গে গেছে।

এ সময় আনসার সদস্যরা সাংবাদিকদের সম্পর্কে খারাপ ভাষায় গালাগাল দেওয়ার পাশাপাশি দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ করেন জয়ীতা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত