চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিধবা নারীকে গলাকেটে হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

মুল আসামী মেয়ে জামাই গ্রেফতার,আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, এক বছর পূর্বে শ্বশুরকে হত্যারও দায় স্বীকার

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২০, ২২:০২

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় রোকেয়া বেগম (৬০) নামে বিধবা এক নারীকে গত শুক্রবার (১২ জুন) দিবাগত রাতে তার নিজ বাড়িতে গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত হাসুয়া ছাড়াও অনান্য আলামত।

এছাড়া পরিকল্পিত এই হত্যাকান্ডের মূল আসামী নিহতের সৎ মেয়ের জামাই সেকেন্দার আলী সহ ৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। আসামী সেকেন্দার আলী বুধবার (১৭ জুন) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এরশাদ আলীর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। 

জবানবন্দীতে সে হত্যার কারণসহ বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে এক বছর পূর্বে গত ২০১৯ সালের ১৪ জুন সে তার শ্বশুর শুকুদ্দী মোন্নাকেও ঘাড় মটকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। ওই সময় শুকুদ্দীর গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যুটি (আত্মহত্যা) অপমৃত্যু মামলা (ইউডি) হিসেবে রেজিষ্টার হয়। সেটি হত্যা মামলায় রুপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বুধবার (১৭ জুন) বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং-এ এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব। পুলিশ সুপার বলেন, মূলত: সামান্য কিছু সম্পত্তির (১কাঠার উপর বসতবাড়ি ও সংলগ্ন ১৪ কাঠার আমবাগান) লোভেই এক বছরের ব্যবধানে ভিক্ষুক দম্পতির পরিকল্পিত ‘ক্লুলেস’ হত্যাকান্ড দুটি সংঘটিত হয়। রোকেয়া হত্যায় সেকেন্দার সহ শুকুদ্দীর আগের পক্ষের চার মেয়ের জামাই এর পারষ্পাপরিক যোগসাজস ও  সংশ্লিস্টতার প্রমান মিলেছে। দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া হত্যায় চার জামাই এর সাড়ে ১২ হাজার করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে  ভাড়া করা চারজন খুনীর জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখন দুটি মামলারই পূর্ণ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (১৩ জুন) দুপুরে পুলিশ মহারাজপুর ইউনিয়নের পূর্ব টিকরা গ্রামে লোকালয় থেকে কিছুটা বিছিন্ন একটি আমবাগানের ভেতরে রোকেয়ার বাড়ির একটি ঘর থেকে তার বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার করে। এসময় মরদেহটি বস্তা,কাপড় ও লেপ-কাঁথা দিয়ে ঢাকা ছিল। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ইসিম আলী ওইদিনই সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে হত্যা মামলা করেন। নিহত রোকেয়ার স্বামীর আগের পক্ষের চার ছেলে ও চার মেয়ে থাকলেও রোকেয়ার কোন সন্তান ছিল না।  শুকুদ্দীর যে সম্পত্তি নিয়ে দুই  হত্যাকান্ড তা চার মেয়ের মধ্যে লিখে দেবার কথা ছিল। হত্যাকান্ড দুটিতে শুকুদ্দীর চার ছেলের কোন সম্পৃক্ততা এখনও পুলিশ পায় নি।

মূল আসামী সেকেন্দার আলী একই ইউনিয়নের পশ্চিম টিকরা গ্রামের মৃত লুথু মন্ডলের ছেলে। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার ভাড়াটিয়া খুনী দুজনও একই ইউনিয়নের জোড়বকুলতলা গ্রামের বড় সাহেব(৪০) ও মিন্টু রহমানের ছেলে রুবেল ওরফে বারতের(২৩)। তিনজনই দাগী অপরাধী ও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম ও ইকবাল হোছাইন,সদর থানার অফিসার ইনচার্য (ওসি) জিয়াউর রহমান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্য (ওসি) বাবুল সরদার, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ও সদর থানার পরিদর্শক(অভিযান) মিন্টু রহমান সহ সংশিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত