দেশের করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশংকা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২০, ১০:৪৩

সাহস ডেস্ক

সরকার দেশে লকডাউন শিথিল করে অফিস ও পরিবহন খাত পুনরায় চালুর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এরফলে দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে এবং সামনের দিনগুলোতে হাসপাতালগুলো বাড়তি রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাবে।

শনিবার (৩০ মে) সকাল পর্যন্ত দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৮জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ১,৭৬৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৬১০ জনে দাঁড়ালো। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪৪ হাজার ৬০৮ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মাস্ক ব্যবহারসহ তাদের নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, দুইমাসের শাটডাউন তুলে নেওয়ার পরে মানুষের চলাচল বেড়ে গিয়ে দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সরকারের ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করা গেলে এপরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, বাসা থেকে কেউ বের হতে চাইলে তাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, অফিসে ও যানবাহনের যেকোনো স্থানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো কিছু স্পর্শ করার পরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

অধ্যাপক বড়ুয়া বলেন, জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় সরকার শাটডাউনটি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখন সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশিকা কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে। পুনরায় শুরু হওয়া অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রভাব সরকার পর্যবেক্ষণ করবে এবং দুই সপ্তাহ পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, যাত্রীরা যদি মাস্ক না পরে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে গণপরিবহনে যাতায়াত করেন তবে ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাবে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এবিষয়ে নজরদারি আরও জোরদার করতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রীকে যানবাহন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না।

‘ভুল পদক্ষেপ’

আন্তঃজেলা বাস চলাচল পুনরায় চালু করে দেওয়ায় করোনভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আসা অব্যাহত থাকবে।

বিএসএমএমইউ উপার্চায বলেন, স্বাস্থ্য নির্দেশনা না মেনে যেভাবে ছুটি কাটিয়ে মানুষ ফিরে আসা শুরু করেছেন তাতে ভাইরাসের আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। আমরা ধরে নিতেই পারি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ জুন অবধি বাড়বে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডাঃ বি-নাজির আহমেদ বলেন, প্রতিদিন যেখানে করোনাভাইরাসের আক্রান্তে সংখ্যা বাড়ছে সেসময়ে শাটডাউন তুলে নেওয়াটা ভুল ও ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। এরফলে নিঃসন্দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাবে। আমরা পুরো জুন মাস জুড়েই ভাইরাসের মারত্মক প্রাদুর্ভাব দেখতে পাব।

তিনি বলেন, সরকারকে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার পরে ধীরেধীরে শাটডাউনটি তুলে নেওয়া উচিত ছিল। শাটডাউনটি তুলে নেওয়ার আগে কীভাবে আমরা নিরাপদে পরিবহন সেবা পরিচালনা করতে পারি সেসম্পর্কে পরিবহন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দরকার ছিল।

কোনো ধরনের লক্ষণ ছাড়া বিপুল সংখ্যক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন উল্লেখ করে এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, লক্ষণ ছাড়া এসব রোগীর এখন অফিস, রেস্তোরাঁ, চা স্টল ও পরিবহনে সর্বত্র যাতায়াত করার ফলে অত্যান্ত দ্রুত এ ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে।

ডাঃ বি-নাজির আহমেদ বলেন, হাসপাতালগুলোতে এত রোগীকে সেবা দেওয়ার ক্ষমতা নেই বলে পুরো মাসজুড়ে প্রাণহানির ঘটনাও অনেক বেড়ে যাবে।

সরকারের নির্দেশনা মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিন

গত ২৮ মার্চ দেশের আটজন চিকিৎসক নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি দল গঠন করে। এতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও মহামারি প্রতিরোধের জন্য সরকারের প্রচেষ্টা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগ থেকে একজন করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা তাদের পরামর্শ ও নির্দেশনাসহ একটি ৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ডাঃ আবু জামিল ফয়সাল মনে করেন, সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চললে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার সাথেসাথে করোনাভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে উঠবে না।

তিনি বলেন, আমরা যদি মানুষকে বোঝাতে ও অনুপ্রাণিত করতে পারি যে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে তাদের নিজেদের চেষ্টা করতে হবে, তবে তারা নিজেরাই কাউকে বাড়ি থেকে বের হতে এবং মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেবেন না। তারা নিজেরাই কোনো আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবাধে চলাফেরা করতে দেবেন না। যদি কোনো পরিবার বা বাড়ি লকডাউনে রাখা হয় তবে তারা নিজেরাই তাদের সহায়তা করতে পারবেন।

ঢাকা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত