সাংবাদিককে তুলে নিয়ে দণ্ড: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২০, ১৯:৪৩

সাহস ডেস্ক

কুড়িগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ঢাকা ট্রিবিউন সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া কারাদণ্ডের বিষয়টি তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কেএম তরিকুল ইসলাম।

শনিবার (১৪ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং জেলা ও মাঠপ্রশাসন অনুবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ গফফার খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

কেএম তরিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে ইতিমধ্যে কুড়িগ্রামে একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার গিয়েছেন। এই ঘটনাটি সরকার ও প্রশাসনকে বিব্রত করেছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আরিফের প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সাধারণভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত এভাবে পরিচালনা করা যায় না। আমি এই ঘটনার বিষয়ে এখনও অবগত নই। তবে সেখানে আইনের কোনও ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এই ব্যপারে বলেন, ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অবৈধ। ডিসি আইনের উর্ধ্বে নন। যদি ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম করা হয়, তাহলে ডিসির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আইন অনুযায়ী মধ্যরাতে কারো দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার এখতিয়ার নেই। মোবাইল কোর্টকে অবশ্যই ঘটনাস্থলে বিচার করতে হবে। এক জায়গা থেকে ধরে নিয়ে অন্য জায়গায় দণ্ড দেওয়া যাবে না। যে সময়ে এবং যে প্রক্রিয়ায় দণ্ড দেওয়া হয়েছে তা বেআইন, অবৈধ এবং নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

কোনো বিশেষ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এমন অভিযান চালানো যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, টাস্কফোর্স কারো দরজা ভেঙ্গে ঢুকতে পারে না। তাদেরকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৩ মার্চ) কুড়িগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ঢাকা ট্রিবিউন সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে একবছরের জেল দিয়েছে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। দুই থেকে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৫-১৬ জন আনসার সদস্য দরজা ভেঙে আরিফুলের বাড়িতে ঢুকে তাকে তুলে নিয়ে যায়।

পরিবারের সদস্য জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে বাড়ির গেটে ধাক্কাধাক্কির শব্দ পান তারা। এসময় দরজা না খুললে তা ভেঙ্গে ফেলা হবে বলেও তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়। সেসময় কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমানকে ফোন করা হলে ওসি জানান, থানা থেকে কোনও পুলিশ সেখানে যায়নি, কারা গেছে বিষয়টি দেখছেন তিনি। একপর্যায়ে দরজা ভেঙ্গে ৭ থেকে ৮ জন সাদা পোশাকধারী তাদের বাসায় প্রবেশ করে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে আরিফুলকে মারতে মারতে ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। এরপর আরিফুল তাদের কাছে কারণ জানতে চাইলে তারা আবারও তাকে মারধর করে। এরপর তাকে সরাসরি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

আরিফুল ইসলাম তার স্ত্রীকে জানান, মধ্যরাতে তাকে বাসা থেকে জোর করে তুলে আনার পথে জেলা প্রশাসক কার্যালয় পর্যন্ত লাথি-থাপ্পড়, ঘুষি মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তার দুই চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর প্যান্ট ও গেঞ্জি খুলে তাকে উলঙ্গ করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এসব দৃশ্য ভিডিও করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত