এমপিওভুক্ত তালিকায় শিক্ষক দম্পতির তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:২০

সাহস ডেস্ক

সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নে এক শিক্ষক দম্পতির তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তথ্য গোপন করে স্বামীর নামে একটি ও স্ত্রীর নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য তারা আবেদন করেন। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।

প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো- দেউলমুড়া এন আর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, দেউলমুড়া জিআর মডেল বালিকা বিদ্যালয় ও দেউলমুড়া জিআর বালিকা বিদ্যালয় (সেক্রেটারিয়াল সায়েন্স)। 

আলোচিত এ দম্পতি হলেন- হাতেম হাসিল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম নান্নু এবং তার স্ত্রী রুবা খাতুন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বামীর প্রতিষ্ঠানের একটি নির্মাণাধীন ভবন থাকলেও সেখানে কোনো শিক্ষার্থী নেই। এমনকি কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে পাওয়া যায়নি। একটি প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় দাঁড়িয়ে পাশাপাশি স্থাপিত অপর দুইটি প্রতিষ্ঠান সহজেই দেখা যায়। ১শ’ গজের মধ্যে স্থাপিত তিনটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় কীভাবে স্থান পেল তা নিয়ে এলাকাবাসীর কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। কাছাকাছি তিনটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন অনেক শিক্ষকও।

অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী দেখিয়ে এমপিওভুক্তির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। ল্যাবসহ কম্পিউটারের সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও এমপিও হয়েছে। কাগজে কলমে স্থান ও ছাত্র-ছাত্রীর নাম ঠিকঠাক থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।

অভিযোগ রয়েছে, এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের কাগজপত্রে চরম জালিয়াতি রয়েছে। যে কারণে এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষক কর্মচারীকে নিয়োগ ও যোগদানপত্র দেয়া হয়নি।

জানা গেছে, বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নে মিরের দেউলমুড়া জিআর মডেল বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান এর প্রতিষ্ঠাতা রুবা খাতুনকে। এই প্রতিষ্ঠানের নামেই খোলা হয় কারিগরি শাখা।

এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হলেন তার স্বামী হাতেম হাসিল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম নান্নু। তিনি চাকরির নিয়ম ভঙ্গ করে নিজের ও স্ত্রীর নামে দেউলমুড়া এনআর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। নান্নু নিজেই এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। এভাবেই দীর্ঘদিন যাবৎ বিধিভঙ্গ করে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে যাচ্ছেন শিক্ষক নান্নু।

এদিকে, এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম আসায় আগের কর্মচারীদের নাম বাদ দিয়ে স্বামী-স্ত্রী নতুন করে নিয়োগ বাণিজ্যে নেমেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

রফিকুল ইসলাম নান্নু সম্পর্কে জানতে চাইলে হাতেম হাসিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ইসলাম নান্নু মিয়া তার প্রতিষ্ঠানে গত ১৫ বছর যাবৎ সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং তার নিজের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি চাকরি থেকে ইস্তফাপত্র জমা দেয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে ইউএনবির পক্ষ থেকে রফিকুল ইসলাম নান্নুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হাতেম হাসিল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন বলে জানান।

তবে, একটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে নিজে অন্য প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল্লাহ জানান, এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত এমপিও পাবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীমুর রহমান জানান, এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম আসলেই যে প্রতিষ্ঠান সরকারি বেতনভুক্ত হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও যাচাই-বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশনাও এসেছে।

সূত্র: ইউএনবি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত