টুকটুকে লোহা আর হাতুড়ির টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পল্লী

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০১৯, ১৪:২৫

আর মাত্র তিন দিন পরেই ঈদুল আযহা। প্রস্তুতি হিসেবে দা, ছুরি, বটিদা, কাটারী নানা ধরনের উপকরণ তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জ জেলার সকল কামার পল্লীর কামারেরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের। লাল টুকটুকে লোহা আর হাতুড়ির টুংটাং শব্দে মুখরিত সিরাজগঞ্জের কামার পল্লীগুলো।

রাত-দিন হাতুড়ি ও লোহার টুং টাং শব্দে সরগরম এলাকা। আর নাওয়া-খাওয়া ভুলে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন কামাররা। তৈরি করছেন কাটারী, হাঁসুয়া, ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি। পাশাপাশি চলছে মোটরচালিত মেশিনে পুরাতন সরঞ্জামে শান দেওয়ার কাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও কামার পল্লীতে ব্যস্ত কামাররা। সারা বছর কাজের চাপ না থাকলেও ঈদুল আজহার আগে কাজের চাপ বাড়ে। কামারদের দাবি, এই কোরবানির মৌসুমেই তাদের সবচেয়ে বেশি কাজ হয়।

তবে কয়লার দাম বেশি হওয়ায় অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ছুরি, দা, বটির দাম কিছুটা বেশি বলে জানান কামাররা। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কামার শিল্প বিলুপ্তপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। উল্টো প্রযুক্তির দাপটে ক্রমেই মার খাচ্ছে এ শিল্প। বছরের ১১ মাস কামারশালায় তেমন একটা কাজ থাকে না বললেই চলে।

সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। আগুনের শিখায় তাপ দেওয়া লাল টুকটুকে লোহা হাতুড়ির পেটানোর টুং-টাং শব্দে তৈরী হচ্ছে ছুরি, দা, বটিদাসহ নানা রকমরে অস্ত্র। 

সদর উপজলোর বাহিরগোলা কামার কারখানা গুলোতে দেখা যায়, অনেকেই পরিবারের অব্যবহৃত ও দা ছুরি শান দিতে ভীড় করেছে আবার চলছে কামারদের বিরামহীন ব্যস্ততা। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়েও দোকানে বেড়েছে মৌসুমি কর্মচারীর সংখ্যা।

কার্তিক কর্মকার বলেন, আমার পূর্ব পুরুষ থেকেই আমরা এই পেশা ধরে রেখেছি। সাধারণত স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে এই দা, বটি ও ছুরি তৈরী করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরী উপকরণের মান ভালো, দামও বেশ। আর কাঁচা লোহার তৈরী উপকরণ গুলোর দাম তুলনা মূলকভাবে কম হয়ে থাকে। এছাড়াও লোহার মান অনুযায়ী স্প্রিং লোহা ৫০০ টাকা, সাধারণ লোহার তৈরী ৩০০ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। 

কান্দাপাড়া এলাকার দিপক কর্মকার বলেন, বাপ-দাদার আমলে কামারশিল্পের বেশ চাহিদা ছিল। এ কারণে বংশ পরম্পরায় তিনি নিজেকে এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছেন। তবে সেই আগের সেই স্বর্ণ যুগ আর নেই। বর্তমান প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে আমাদের তৈরী করা জিনিস পত্রের চাহিদাও একদম কমে গেছে। বছরের ১১ মাস ব্যবসা কোনো রকম চলে আর কোরবানির ঈদের ব্যবসা দিয়ে কোন রকম চলছি। 

কিন্তু ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রয়ের সাথে বেড়ে যায় ব্যস্ততাও। তিনি আরো বলেন, কোরবানিতে ব্যবহৃত এসব অস্ত্রের দাম কিছুটা বাড়লওে এর প্রভাব পড়েনি ক্রেতাদের মাঝে। অনেকেই স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে এই দাম বাড়ার বিষয়টি।

এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। একসময় স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি ব্যবসায়ীদের চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। কিন্তু মেশিনারির সাহায্যে বর্তমানে তৈরী হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। ফলে কামারদের চাহিদাও হারাতে বসেছে।

মোখলেস নামে এক ক্রেতা বলেন, 'ঈদের আর কয়েকদিন বাকি। তাই আগে থেকেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কিনে রাখছি।' আরেক ক্রেতা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, 'পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি পুরাতনগুলোতে শান দিতে নিয়ে এসেছি।'

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত