রংপুরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে হাঁড়িভাঙার মুকুল

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:০০

সাহস ডেস্ক

আঁশবিহীন সুস্বাধু আম হাঁড়িভাঙা। গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল, ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণে চাষিদের মনও চাঙা। প্রকৃতিও বেশ অনুকূলে। ডালে ডালে ভরা আমের মুকুলে স্বপ্ন বুনছেন রংপুরের আম চাষিরা। এখন প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়া নেই। আমের মুকলে ছেয়ে গেছে হাঁড়িভাঙা আমের বাগানগুলো। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে হাঁড়িভাঙা আমের বাম্পার ফলন আশা করছেন আমের বাগানমালিক ও চাষিরা।

রংপুর সদরের পালিচড়া, বদরগঞ্জের শ্যামপুর, মিঠাপুকুরের খোঁড়াগাছসহ বিভিন্ন এলাকা হাঁড়িভাঙা আমের জন্য খ্যাত। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমবাগানগুলো হলুদ আভায় ছেয়ে গেছে। বসন্ত বাতাসে গাছে গাছে দোল খাচ্ছে মুকুল। ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও শুরু হয়েছে। যেন বদলে গেছে গ্রামীণ জনপদের দৃশ্যপট।

বাগানমালিকেরা জানালেন, ফল হিসেবে আম লাভজনক মৌসুমি ব্যবসা হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে আমবাগানের সংখ্যা। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় হাঁড়িভাঙা আম বদলে দিয়েছে এখনকার চাষিদের জীবনমান।

মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ এলাকার আমচাষি মেহেদী হাসানের তিনটি আমবাগান। প্রতিটি বাগানে ৪০০ করে ১ হাজার ২০০ গাছ আছে। মেহেদী বলেন, এ পর্যন্ত আবহাওয়া খুব ভালো রয়েছে। মুকুলে ছেয়ে গেছে সবগুলো বাগান। মুকুল আসার আগে গাছের গোড়ায় গোবর সার দেওয়া হয়েছে। পোকামাকড় যেন গাছে ভিড়তে না পারে, এ জন্য ওষুধ ছিটানো হয়েছে। সব মিলিয়ে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, তাহলে বাম্পার ফলন আশা করছেন তিনি।

পালিচড়া, মিঠাপুকুরের খোঁড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জের গ্রামগুলো ঘুরে আমবাগানে মুকুলের হলদে ভাব দেখা যায়। বাগান ছাড়াও ফসলি জমির আইলে লাগানো হয়েছে আমের গাছ। বসতবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা, পুকুর পাড়, বাড়ির উঠানসহ প্রতিটি স্থানেই গাছে গাছে দোল খাচ্ছে মুকুল আর মুকুল। একই চিত্র মিঠাপুকুরের আখিরাহাট, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, সর্দারপাড়া, রংপুর সদরের সদ্যপুষ্করনী ইউনিয়নের কাঁটাবাড়ি, পালিচড়া এলাকাতেও।

মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, উপজেলার পদাগঞ্জ হাঁড়িভাঙা আমের জন্য প্রসিদ্ধ। এ ছাড়া ময়েনপুর, রানীপুকুর, চেংমারী, বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে দিন দিন হাঁড়িভাঙা আমের বাগান বেড়েই চলেছে। ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মারসালিন ইসলামের প্রায় ১০ একর জমির ওপর আমবাগান। তিনি বলেন, হাঁড়িভাঙা আম এই এলাকার মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। মানুষ কর্মমুখী হয়েছে। আমের মুকুল দেখে ফলন ভালো হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।

হাঁড়িভাঙা আম ঘিরে চাষিদের পাশাপাশি তরুণ-যুবকেরাও উদ্যোক্তা হয়ে ব্যবসা করার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। আমগাছে মুকুল দেখে দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আগাম যোগাযোগ শুরু করেছেন আমচাষিদের সঙ্গে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, রংপুরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয় ২০ মেট্রিক টন। মুকুল আসার চার মাসের মধ্যে আম কৃষকের ঘরে ওঠে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আম গাছর পরিচর্যা করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া যদি রৌদ্রোজ্জ্বল হয় এবং তাপমাত্রা একটু একটু করে বাড়ে তাহলে আমগাছের জন্য আরও ভালো। প্রকৃতি বিরূপ না হলে গত বছরের মতো এবারও আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এসব এলাকার চাষিরা ধানের আবাদ ছেড়ে দিয়ে ঝুঁকছেন আম চাষে। প্রতিবছর আম চাষ করে লাখ লাখ টাকার আয়ে শুরু হয়েছে তাদের দিন বদলের গল্প। ভাগ্য বদলে গেছে আমচাষিদের। হাঁড়িভাঙা আম রংপুরের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ।

কৃষি সম্প্রসারণে বিভাগ জানায়, হাঁড়িভাঙা আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। গত বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার আম বিক্রি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও বেশি টাকার আম বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জুনের মাঝামাঝি সময় হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসবে।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত