লাউ গাছের পরিচর্যা

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:২৭

সাহস ডেস্ক
আলোকচিত্রঃ আবুল বাশার শিবলী, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকা।

শীতের সময় যে সবজি সবচাইতে বেশি হয়ে থাকে তার মাঝে একটি হচ্ছে লাউ। লাউ গাছ শুধু নয় এর পাতা সবজি হিসেবে সবার পছন্দ। আর লাউয়ের লতাপাতা লাউ সব কিছুই পুষ্টিগুণে ভরা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সবজির মধ্যে লাউ ও পেঁপের কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। এ দুটো সবজি কাঁচা, রান্না, পাকা, ভাজা, ভর্তা, তরকারি যেভাবেই খাওয়া হোক কোনো ক্ষতি করে না; বরং উপকার করে। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার এবং খুব কম ক্যালোরি থাকে; যা ওজন কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। লাউ চাষে গাছের নিতে হয় সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা। নয় তো ভালো লাউ বা শাক কোনোটাই পাওয়া যায় না। আসুন জেনে নেই লাউ গাছের সঠিক পরিচর্যা কীভাবে করবেন।

লাউগাছ পরিচর্যার :

  • লাউ গাছের প্রচুর পানি প্রয়োজন হয় তাই গাছের পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চির করতে প্রতিদিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।
  • আপনার বাড়িতে প্রতিদিনের মাছ মাংস ধোয়া পানি মাঝে মধ্যে লাউ গাছে দিবেন এতে বিশেষ উপকার পাবেন।
  • খেয়াল রাখবেন টবে বা ড্রামে লাউ গাছের প্রয়োজনীয় পানির চেয়ে বেশি হলে ফলন ব্যাহত হবে এবং ফল ছোট অবস্থাতেই ঝরে যাবে।
  • টবে বা ড্রামে লাউ চাষ করতে পানি একটু বেশি প্রয়োজন হয়। তাই নিয়ম করে পানি দিন।
  • মাসে অন্তত কয়েক বার লাউয়ের পাতা তুলে নিন এবং লাউ গাছে সবসময় যথেষ্ট সূর্যের আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা করুন এতে ফলন আরো ভালো হবে।
  • গাছের সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে এর গোড়ায় নিয়মিত কচুরিপানা ও নানা ধরণের জৈব সার প্রয়োগ করুন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সার গাছের গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দূর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • বড়িতে সব সময় যে সকল শাক সবজি কাটা হয়, সেগুলো থেকে ফেলে দেয়ার জন্য যা বের হবে সেগুলো সার করে লাউ গাছের গোড়ায় দিতে পারেন। এতে গাছা প্রাকৃতিক সার পাবে।

ক্ষতিকর পোকা দমন:

  • ছাদে বা লাউয়ের মাচায় পাখি বসার ব্যবস্থা রাখুন এতে অনেকটা প্রাকৃতিকভাবেই পোকা দমনের কাজ হয়ে যাবে।
  • ফ্রুট ফ্লাই কচি লাউয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে এবং খুব ছোট অবস্থায় লাউয়ের কচি কড়া পচে ঝরে পরে। এজন্য লাউ গাছে ছাই ছিটিয়ে দিন অথবা ডায়াজিনন প্রয়োগ করতে পারেন।
  • পিঁপড়া লাউ গাছের তেমন ক্ষতি না করলেউ ফুলে আক্রমণ করে ক্ষতি করতে পারে। লাউ গাছ কে পিঁপড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে ছাই অথবা সেভিন দিতে পোকা দমনে সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ খুব কার্যকরী একটা কৌশল। এটা পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করে সহজেই ধ্বংস করে এবং তৈরি করাও অনেক সহজ।
  • বিষটোপ ফাঁদ ব্যবহার করেও পোকা দমন করা যায়। বিষ টোপ তৈরি করতে ১০০ গ্রাম থেতলানো কুমড়ার সাথে ০.২৫ গ্রাম ডিপটেরেক্স পাউডার ও ১০০ এমএল পানি মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রনটি মাটির পাত্রে ঢেলে টব বা ড্রামের কাছে রেখে দিন। সাধারণত তিন চার দিন পর পর বিষটোপ পরিবর্তন করলে ভালো কার্যকরীতা পাওয়া যায়।
  • শুষ্ক মৌসুমে লাউ গাছে ৪/৫ দিন পর পর সেচ দিবেন এবং প্রত্যেক সেচের পর গাছের গোড়ার মাটি ঝুরঝুর ভাব নষ্ট হতে চটা লেগে যায় তা আলতো করে ভেঙে দিবেন তাতে শিকড় ভালোভাবে মাটির গভীরে ছড়ায় ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়।
  • লাউ গাছের গোড়ার দিকের শোষক শাখা বা ছোট ছোট ডালপালা কেটে অপসারণ করতে হবে। এগুলো লাউ গাছের শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায় এবং খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয় যার কারণে ফলন কমে যায়।
  • লাউয়ের ফুলে প্রাকৃতিক পরাগায়ন ঠিক মতো না হলে ফলন কমে যায়। সেক্ষেত্রে হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন ঘটিয়ে ফলন শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।
  • লাউ গাছ অনেক বড় হয় কিন্তু তা অপেক্ষায় ফুল কম ধরে। এমতাবস্থায় জৈব সারের মাত্রা কমিয়ে টিএসপি ও এমপি সার পরিমিত মাত্রায় অথবা গ্রোথ হরমোন স্প্রে করতে পারেন

তথ্যসূত্র : লাউ উৎপাদনের আধুনিক কলাকৌশল, কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস)www.ais.gov.bd

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত