হলুদ তরমুজে বদলে গেছে কৃষক মিস্টুর ভাগ্য

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২০

তাজুল ইসলাম তছলিম, হাতিয়া

খেতের মধ্যে নানা রঙের তরমুজ মাচায় ঝুলছে, হলুদ কালো সবুজ এই তিন রঙের তরমুজে ছেয়ে গেছে পুরো খেত, তা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে সাধারণ মানুষ, কেউ পরিবারের জন্য কিনে নিচ্ছেন এই রসালো ফলটি, আবার কেউ শুধু খেতের পাশে দাড়িয়ে ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় জানান দিচ্ছে এই বৈচিত্রময় সংবাদটি।

নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার তমরদ্দি ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামে কৃষক মো: মিষ্টুর হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজ চাষের দৃষ্য এটি। নিজের বাড়ীর দরজার পাশে প্রায় ৫০ শতক জমিতে কৃষক মিষ্টু এই তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছে।

সরেজমিনে গত বুধবার বিকেলে জোড়খালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, খেতের পাশে বাড়ীর দরজার উপর হলুদ ও কালো রঙ্গের তরমুজের স্তুপকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে আছে অনেকে। এদের মধ্যে কয়েকজন তরমুজ ব্যাপারী হলেও অন্যরা এসেছে দেখতে। কেউ কেউ বাহারি ধরনের এই তরমুজ হাতে নিয়ে ছবি তুলছে।

মালচিং পদ্ধতিতে এ তরমুজ চাষ হচ্ছে। মাচায় ঝুলছে হলুদ তরমুজ। সবুজ পাতার মধ্যে যেদিকে চোখ গেছে, শুধু হলুদ তরমুজ ঝুলতে দেখা গেছে। কিছু কিছু অংশে কালো ও সবুজ রঙ্গের তরমুজও আছে খেতে। তবে হলুদ তরমুজের সংখ্যা অনেক বেশী। কৃষক মিস্টু ও তাঁর দুই সহকর্মী তরমুজগাছের পরিচর্যা করছিলেন।

আলাপ কালে কৃষক মিস্টু বলেন, 'গত বছর আমি ২০ শতক জমিতে কালো তরমুজ করে ভালো ফলন পেয়েছি। এ বছর আমি ৫০ শতক জমিতে কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের তরমুজ চাষ করেছি। খেতে থাকা ফলনের মধ্যে এখন পর্যন্ত অর্ধ্বেকের চেয়ে কম তরমুজ বিক্রি করেছি তাতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা পাওয়া গেছে। খেতে এখনও যে পরিমান তরমুজ আছে তাতে আরো দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করা যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

এই বছর দুই কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১শত ৫০ টাকায়। ব্যাপারী এসে ক্ষেত থেকে পরিমাপ করে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ খুচরা কিনতে আসে খেতে। কৃষি বিভাগের লোকজন এসে আমাকে সহযোগিতা করছেন বিভিন্ন ভাবে। খেতে থাকা অধিকাংশ তরমুজের গায়ের রং হলুদ। ভেতরে লাল টকটকে। যেহেতু এটি বারোমাসি ফসল, আগামী ১০ থেকে ১৫দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে এই ৫০শত জমিতে থাকা তরমুজ গাছে আবার ফলন দেখা দিবে।

পেশায় পাওয়ারটিলার চালক মিস্টু আরো জানান, নিজের পেশায় কাজ করতে গিয়ে যশোর যেতে হয়েছে তাকে। সেখানে সে পাওয়ারটিলার চালিয়েছে তিন বছর। তখন সে দেখে এসেছে ব্লাকবেরী এই তরমুজ চাষ। এরপর যশোর থেকে প্রথম বছর চারা এনে সে এই তরমুজ চাষ শুরু করেন। এই বছর সে নিজে বীজ এনে চারা তৈরী করে চাষ করেছে। তার খেতের তরমুজ দেখে পাশবর্তী অনেক কৃষক আগ্রহী হচ্ছে এই তরমুজ চাষে। আগামীতে এক একর জমিতে এই তরমুজ চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে তার। তবে এই চাষে পর্যাপ্ত পানির সেচের সম্যায় পড়তে হয় তাকে।

তমরদ্দি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, কৃষক মিস্টুর খেতে থাকা তরমুজ তিন ধরনের। এর মধ্যে তৃপ্তি, ব্লাকবেরী ও কনিয়া। এর মধ্যে (তৃপ্তি) হলুদ তরমুজের পুষ্টিগুণ বেশি, মিষ্টিও বেশি। তমরদ্দি ইউনিয়নের এই এলাকার মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। মিস্টু উদ্যোমী কৃষক। তার আগ্রহ থেকেই হাতিয়ায় প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে হলুদ তরমুজের।

এ ব্যাপারে উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা জসিম উদ্দন বলেন 'কৃষক মিস্টু এই অঞ্চলে নতুন গল্পের সূচনা করলেন। আমরা তার সঙ্গে আছি। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সকল ধরনের সহযোগীতা করা হবে। আমাদের কর্মীরা প্রতিনিয়ত তাঁর সাথে যোগাযোগ রাখছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত