কৃষি বাঁচাতে ‘জৈব সার’

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১৪:০১

সাহস ডেস্ক

খাদ্যের পুষ্টিগুণ রক্ষায় অন্যতম হাতিয়ার জৈব সার। রাসায়নিক সার ব্যবহারে ফলন বেশি হলেও ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় জমির গুণাগুণ। বাংলাদেশের জমিতে জৈব সারের উপাদান থাকা উচিত স্থানভেদে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে তার পরিমাণ দুই শতাংশ । জৈব সারের মাত্রা এই ভাবে কমতে থাকলে ভবিষ্যতে রাসায়নিক সার ব্যাপক মাত্রায় প্রয়োগ করা হলেও উৎপাদন করা সম্ভব হবে না ফসল। 

কৃষিবিদ পাপিয়া শারমিন যূথী বলেন, রাসায়নিক সার ব্যবহারে প্রথমে জমিতে ফলন তুলনামূলক বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ধীরে ধীরে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিন জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়।

প্রাকৃতিক সারে রয়েছে বহুমুখী গুণ। ফসলি জমির দীর্ঘ মেয়াদি আবাদের জন্য জৈব সার ব্যবহার করা অতীব জরুরি। কারণ রাসায়নিক সার ব্যবহারে ধীরে ধীরে জমির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। জৈব সার মাটির উপকারী পতঙ্গদের বাঁচিয়ে রাখতে ও বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাটির রস ধরে রাখতে সহায়ক হয় যার ফলে অধিক সেচের প্রয়োজন হয় না। জৈব সার যেমন ফসলের ফলন ধরে রাখতে সহায়ক ঠিক তেমনি খাদ্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণ ও গুদামজাত করতেও সহায়ক হয়। 

গ্রীষ্মকালে মাটির তাপমাত্রা কমাতে এবং শীতকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে জৈব সার। ফসলের শিকড় বৃদ্ধি এবং মজবুত করে ফলে ফসল দুর্যোগে সহনশীল রূপ ধারণ করে। জৈব সারের প্রভাব ৬ থেকে ১৮ মাস ধরে মাটিতে থেকে যায়, যার কারণে দুই বা তিন ফসল ধরে এর গুণাগুণ অক্ষত থাকে। দীর্ঘদিন রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমিতে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে এবং জৈব সার ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক সার কম মাত্রায় প্রাদান করলেও চলে। জৈব সারে কীটনাশক প্রদান করতে হয় কম এবং অধিক প্রদানে মাটির গুণাগুণে কোনো ক্ষতি হয় না।

অনেক ধরনের জৈব সার হয়ে থাকে যেমন কেঁচো সার, গোবর সার, গৃহস্থালির বর্জ্য পচিয়ে সার, মিশ্র সার (গোবর ও বর্জ্য) গাছের পাতা-গুল্ম-কাণ্ড পচিয়ে সার, মানুষের মলমূত্র দিয়ে প্রস্তুতকৃত সার ইত্যাদি। তবে গোবর সার সর্বাধিক ব্যবহ্রত হয় বাংলাদেশে। এসব সারের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে ফুল বাগানে তরল জৈব সারের ব্যবহারো করেন অনেকে।

ধীরে ধীরে রাসায়নিক সার মুক্ত খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে সচেতন মানুষদের মাঝে। ঢাকা শহরে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত খাদ্য পণ্যের দোকান। প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রের প্রধান দেলোয়ার জাহান বলেন, রাসায়নিক সারমুক্ত খাদ্য দ্রব্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। রাসায়নিক সার সমৃদ্ধ খাদ্যে থাকে নানান ধরনের রোগের শঙ্কা তাই সচেতন ব্যক্তিরা সামান্য অর্থ বেশি খরচ করে ঝুঁকছেন জৈব সারে উৎপাদিত খাদ্যের দিকে।

  • বাংলাদেশের মাটিতে ২% এর কম জৈব পদার্থ রয়েছে যদিও তা ৩%-৫% থাকা উচিৎ। তাই মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমান বৃদ্ধির জন্য জৈব সার ব্যবহার করা উচিৎ।
  • মাটি গঠন ও গুনাগুন উন্নত করে। বেলে মাটি সরস হয়। তাছাড়া এঁটেল মাটিকে কিছুটা দোআঁশ মত করে ফসল উৎপাদনের অধিক উপযোগী করে তোলে।
  • জৈব সার ব্যবহারের পর গাছের প্রয়োজন অনুযায়ি অনেকদিন ধরে গাছ খাদ্য উপাদান গ্রহন করতে পারে। জমিতে প্রয়োগের পর আনুমানিক ৬-১৮ মাস পর্যন্ত এর প্রভাব থাকতে পারে যা পরবর্তি ফসলে কাজে লাগে।
  • জৈব সার ব্যবহারে মাটির উপকারী জিবানুর কার্য্যকলাপ বেড়ে যায় এবং এদের বংশ বিস্তারেও তা সহায়ক হয়।
  • এ সার গ্রিষ্মকালে মাটিতে তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় এবং শিতকালে মাটিকে উষ্ণ রাখতে সহায়তা করে। এতে সব ঋতুতেই গাছের শিকড় বৃদ্ধি পায়।
  • এ সার মাটিতে রস মজুদ রাখতে সহায়তা করে। ফলে অধিক সেচের প্রয়োজন হয় না।
  • মাটিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অধিক ব্যবহারের কোন বিষাক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হলে জৈব সার তা কমাতে সাহায্য করে। জৈব সার বেশি ব্যবহারে মাটির কোন ক্ষতি হয় না।
  • জৈব সার রাসায়নিক সারের কার্য্য কারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং জৈব সার ব্যবহার করলে আনুপাতিক হারে রাসায়নিক সারের মাত্রা কমান যায়।
  • জৈব সার ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে গুনগত মান বাড়ায় এবং গুদাম জাত ও শস্য সংরক্ষনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত