ঐতিহ্যবাহী দানাদার ফসল কাউন চাষ

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২১, ১৬:২২

সাহস ডেস্ক

কাউন একসময় চাষ হতো প্রচুর পরিমাণে। অথচ কালের আবর্তে তা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় গরিবের অন্যতম প্রধান খাদ্য ছিল এই কাউনের চাল। সেই কাউনই যে এখন বিলাসী চাল। 


পুষ্টিগুণ

১০০ গ্রাম কাউনের চালে ৩৭৮ ক্যালোরি প্রোটিন, ৯ গ্রাম পানি, ৭৩ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৪ গ্রাম মিনারেল, ৭৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি, ৩০০ ক্যালোরি ডায়োটরি ফাইবার, পটাশিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম। যা আমাদের খাওয়া সাধারণ চালের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।

উপযুক্ত জমি ও মাটি
প্রায় সব ধরনের মাটিতে কাউনের চাষ করা যায়। তবে পানি দাঁড়ায় না এমন বেলে দোঁআশ মাটিতে এর ফলন ভাল হয়।

জাত পরিচিতি
কাউনের স্থানীয় জাত ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘তিতাস’ নামের একটি জাত আছে। কাউনের এ জাতটি শিবনগর নামে ১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং দেশী বিদেশী জাতের সাথে তুলনামূলক মূল্যায়ণের পর ১৯৮৯ সালে তিতাস নামে অনুমোদন করা হয়। তিতাস জাত উচ্চ ফলনশীল, আগাম রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। তিতাস জাতের গাছ মাঝারি লম্বা, পাতা সবুজ , কান্ড শক্ত । গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না । শীষ বেশ লম্বা, মোটা এবং রেশমী। বীজ মাঝারি আকারের এবং ঘিয়ে রংয়ের । হাজার বীজের ওজন ২.৩-২.৫ গ্রাম । স্তানীয় জাতের চেয়ে ফলন প্রায় ৩০-৩৫% বেশী । জাতটি রবি মৌসুমে ১০৫-১১৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পাকে । তিতাস জাতটি গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন । রবি মৌসুমে তিতাসের ফলন হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন। খরিফ মৌসুমে এর ফলন একটু কম হয়।

বপনের সময় 
দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত বীজ বোনা যায়।  দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বোনা হয়। 

বীজের হার

কাউনের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বোনা যায়। ছিটিয়ে বুনলে হেক্টর প্রতি ১০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।  বীজ সারিতে বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সেমি  রাখতে হবে। চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে সারিতে চারার দূরত্ব ৬-৮ সেমি রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। 

সার ব্যবস্থাপনা
কাউন চাষে সচরাচর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না । তবে অনুর্বর জমিতে হেক্টর প্রতি নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করলে ফলন বেশী হয়।

সারের নাম     সারের পরিমান/শতকে    সারের পরিমান / হেক্টর   
ইউরিয়া         ৩৮৫-৪২৫ গ্রাম                 ৯৫-১০৫ কেজি   
টি এসপি        ২৮৩-৩০৪ গ্রাম                 ৭০-৭৫   কেজি   
এমওপি         ১২১-১৬২ গ্রাম                   ৩০-৪০   কেজি   

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
সেচ বিহীন চাষে সবটুকু সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। সেচের ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া  বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
কাউনএকটি খরা সহিষ্ণু ফসল । তবে রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২ টি হালকা সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন বেশী হয়। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ
কাউনের শীষ খড়ের রং ধারন করলে এবং বীজ দাঁতে কাটার পর কট্‌ করে শব্দ হলে বুঝতে হবে  কাটার উপযুক্ত সময় হয়েছে।

তথ্যসূত্র-কৃষি বাতায়ন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত